দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের। চলতি শীতে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করায় এই প্রকল্পে প্রথম সংশোধন আনা হচ্ছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫০৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ খরচ বাড়ছে।
Advertisement
প্রকল্পটির মূল খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছিল ২৭৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার এবং বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সাহায্য হিসেবে দিচ্ছিল ৮৫০ কোটি টাকা।
এখন প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে ২১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার এবং বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সাহায্য হিসেবে দিচ্ছে ৬ হাজার ৬০৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
প্রকল্পটি চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
Advertisement
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যেসব খাতে খরচ হচ্ছে অর্থপ্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা। আইইডিসিআর ও বিআইটিআইডিতে বিএসএল-৩ ল্যাব স্থাপন করা। একটি মোবাইল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এ বাবদ ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা। ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সংক্রামক হাসপাতালে ৫ শয্যার আইসিইউ সেন্টার স্থাপন করা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি, চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, সিলেটের ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, চট্টগ্রাম স্থলবন্দরে একটি এবং মংলা স্থলবন্দরে একটিসহ মোট সাতটি মেডিকেল স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে।
Advertisement
করোনার ভ্যাকসিন কেনা থেকে মানুষের শরীরে দেয়া পর্যন্ত মোট খরচ করা হবে ৪ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
তার মধ্যে ভ্যাকসিন কেনায় খরচ করা হবে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কোভেক্স (২০ শতাংশ) ১ হাজার ২৯১ কোটি ২৪ লাখে এবং সরাসরি কেনায় (১১ শতাংশ) ১ হাজার ৯৬২ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হবে। ভ্যাকসিন কেনার পর স্টোরেজ ও কোল্ড চেইনের জন্য ২৬৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং পরিবহন ও অপারেশনালে খরচ করা হবে ৭৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
যে কারণে আসছে সংশোধনপ্রকল্পটির প্রথম সংশোধন চারটি কারণে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বিশ্ব ব্যাংকের সাথে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কো-লেন্ডিং করবে। এই অর্থ এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। এআইআইবির দেয়া অর্থ বাস্তবায়নের জন্য নতুন কার্যক্রম চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা; করোনার ভ্যাকসিন কেনা বাবদ বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি দেয়া ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা; করোনা ভাইরাসের বারবার মিউটেশনের কারণে ‘প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড কন্ট্রোল মেকানিজম’ পরিবর্তন হওয়ায় তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা; করোনা পরিস্থিতির শুরুতে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে যথাযথ চাহিদা নিরূপণ করে এবং যথেষ্ট পর্যালোচনা করে ডিপিপি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ডিপিপিতে বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর করা এবং উদ্ভুত নতুন চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ডিপিপি সংশোধন করা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জাতীয় জীবনে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার দ্রুততম সময়ে সঠিক কৌশল অনুসরণ করায় এখন পর্যন্ত এ দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে এ অনাহুত দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের জরুরি সহায়তা তহবিল থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং পরে ২ জুন একনেক সভায় তা অনুমোদিত হয়েছিল।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১১৫ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার টাকা।
পিডি/ইএ/এমকেএইচ