টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো মাঠেই ২২০ রানের সংগ্রহ ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে যখন কেউ খেলেন ৪২ বলে ১০০ রানের সাইক্লোন ইনিংস, তখন আর কোনো সংগ্রহই বড় হওয়ার সুযোগ নেই, যা হয়নি মিনিস্টার রাজশাহীর ক্ষেত্রেও। তাদের করা ২২০ রানের জবাবে মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। যার সুবাদে ৮ উইকেট আর ১১ বল হাতে রেখেই অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ জিতে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল।
Advertisement
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না বরিশালের সামনে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের কাজটা আরও অসম্ভবের পর্যায়ে নিয়ে যান রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সেঞ্চুরিতে রাজশাহী পেয়েছিল ২২০ রানের বিশাল সংগ্রহ। শান্তর সেঞ্চুরির জবাবটা সেঞ্চুরি দিয়েই দিয়েছেন পারভেজ ইমন। যাতে ২২১ রানের লক্ষ্যও মামুলি বানিয়ে ছেড়েছে বরিশাল।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে উইকেটে এসে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন পারভেজ ইমন। তার ব্যাট থেকে এসেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরিটি। জয়ের জন্য যখন ১২ বলে দরকার ছিল ৪ রান, তখন বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জেতার পাশাপাশি মাত্র ৪২ বলে নিজের সেঞ্চুরিও পূরণ করেন ইমন। এর আগে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ছিল তামিম ইকবালের, ৫০ বলে। সেই রেকর্ড এখন দখল করলেন পারভেজ ইমন।
ইমনের এই রেকর্ড সেঞ্চুরির পাশাপাশি ফিফটি হাঁকিয়েছেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবালও। দুজন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছেন ৫৪ বলে ১১৭ রানের জুটি। ইনিংসের ১৪তম ওভারে তামিম ৩৭ বলে ৫৩ রান করে আউট হন। পরে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে মাত্র ২৯ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ম্যাচ শেষ করেন ইমন। আফিফ অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২৬ রান করে। পারভেজ ইমনের ৪২ বলে সেঞ্চুরির ইনিংসে ছিল ৯টি চারের সঙ্গে ৭টি বিশাল ছয়ের মার।
Advertisement
এর আগে রাজশাহীর ইনিংসে মুখোমুখি চতুর্থ ও ইনিংসের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর সুমন খানের করা তৃতীয় ওভারে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক করেন আরেক ইমন (আনিসুল ইমন)। ম্যাচের প্রথম ছক্কাও আসে তার ব্যাট থেকে। মেহেদি হাসান মিরাজের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড লং দিয়ে হাঁকান বিশাল ছক্কা, পরের বলেই ওভারথ্রো থেকে আসে বাউন্ডারি, ৪ ওভারেই রাজশাহী করে ৪০ রান।
আবু জায়েদ রাহী মাত্র ২ রান খরচে রানের গতি থামান। কিন্তু পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে আর রেহাই পাননি কামরুল ইসলাম রাব্বি। প্রথমে ছক্কার পর চার মারেন আনিসুল ইমন। তিনি সিঙ্গেল নিয়ে দেন শান্তকে। অধিনায়ক প্রথমে মারের চার, পরের বলেই বিশাল এক ছক্কা। যার সুবাদে ৬ ওভারে রাজশাহীর সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৬৪ রান। চলতি টুর্নামেন্টে পাওয়ার প্লে'তে এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
পাওয়ার প্লে'র পর ফিল্ডার ছড়িয়ে গেলেও থামেনি ইমন-শান্তর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ফিফটি পূরণের পর শতরান পেরুতে তাদের লাগে ৫৮ বল। এরই মাঝে মাত্র ২৫ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ের মারে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন আনিসুল ইমন। শান্তর ফিফটি হয় ৩২ বল খেলে, ২ চারের সঙ্গে ৫টি বিশাল ছয়ের মারে।
ব্যক্তিগত মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলার পরেও থামার কোনো নিশানা ছিল দুই ওপেনারের ইনিংস। সুমন খানের করা ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই সোজা ছক্কা হাঁকান আনিসুল ইমন। তবে পরের বলে পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন আফিফের হাতে, থেমে যায় ইমনের ৭ চার ও ৩ ছয়ের মারে খেলা ৩৯ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। এরপরের গল্প পুরোটাই শান্তর সেঞ্চুরির। ইমন আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই চার মেরে নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার করেন শান্ত।
Advertisement
ঝড় বইয়ে দেন আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা পরের ওভারে, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও শেষ বলে হাঁকান তিনটি ছক্কা। তার দেখাদেখি সুমন খানের পরের ওভারে জোড়া ছক্কা মারেন তিন নম্বরে নামা রনি তালুকদারও। মাত্র ১৬ ওভারে ১৮০ রান করে রাজশাহী। কিন্তু রান হয়নি পরের দুই ওভারে। মাত্র ৯ রান তুলতে ২টি উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা, ১৮ ওভারে দাঁড়ায় ১৮৯ রান। তখন ৫১ বলে ৯৬ রানের অপরাজিত রাজশাহী অধিনায়ক।
নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করতে তাসকিনের করা ১৯তম ওভারকেই বেছে নেন শান্ত। দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়েই ছক্কা হাঁকান ডিপ মিড উইকেট দিয়ে, পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। মাত্র ৫২ বলে ৪ চার ও ১০ ছক্কায় সেঞ্চুরি করেন শান্ত। তাসকিনের সেই ওভারে আরও ২ ছক্কায় আরও ২১ রান করে রাজশাহী।
শেষ ওভারে হয় আরেক নাটকীয়তা। সেই ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪টি উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। অন্য দুই বলে আবার ৪ ও ৬ মেরে ১০ রান তুলে নেয় রাজশাহী। শান্ত আউট হন ৪টি চার ও ১১ ছয়ের মারে ৫৪ বলে ১০৯ রান করে। শেষ বলে ফজলে রাব্বির ছক্কায় রাজশাহীর ইনিংস থামে ২২০ রানে।
বরিশালের পক্ষে দেদারসে রান বিলিয়েছেন সবাই। শেষ ওভারে ৪ উইকেট পেলেও রাব্বি খরচ করেন ৪৯ রান। এছাড়া ২ উইকেট নেয়া সুমন খানের ৪ ওভারেও আসে ৪৩ রান।
এসএএস/এমএমআর/এমকেএইচ