একই পুকুরে মাছের সাথে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ করে বেকার যুবকদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন সুজন হাওলাদার ও জাকারিয়া হাসান জনি। ইউটিউবে ভিডিও দেখে শুরু করেছিলেন মুক্তা চাষ। বছর শেষে এসেছে সফলতা। ফলে গ্রামের শিক্ষিত যুবকরাও পুকুর বা জলাশয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
Advertisement
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন ধুলাসার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামে মুক্তা চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্নে বিভোর তারা। ২০১৯ সালের শুরুতে ইউটিউবের মাধ্যমে রংপুরের মুক্তাচাষি লিটনের সহযোগিতায় আগ্রহী হন সুজন। তিনি বাড়ির পেছনের ৩০ শতাংশ পুকুরের মিঠা পানিতে ২ হাজার ঝিনুক নিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। প্রথমবার সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ শুরু করেন।
সুজনের সফলতা দেখে ফুফাতো ভাই জনিও মুক্তা চাষ শুরু করেন। তাদের পুকুরে ইমেজ পদ্ধতি, টিস্যু প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ও নিউক্লিয়ার্স বা গোলাকার ধরনের মুক্তা চাষ করছেন।
জানা যায়, চাষ করা একেকটি মুক্তা ৩৫০-৪০০ টাকা বিক্রি করেন সুজন। একটি ঝিনুক থেকে একবারে দুটি মুক্তা জন্ম হয়। সেই ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয় মাছের খাবার। ফলে মাছের পাশাপাশি একই পুকুরে মুক্তা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বেকারদের মাঝে। সরকারি সহায়তা পেলে মুক্তা চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবেন বেকার যুবকরা- এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
Advertisement
সুজন হাওলাদার বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালের প্রথমদিকে মাত্র ৭০০ ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করি। এতে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বছর শেষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করি। চলতি বছর পুকুরে ৬ হাজার ঝিনুকে মুক্তা চাষ চলছে। এবার ৩ লাখ টাকার মুক্তা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
মুক্তা চাষে সময় বেশি লাগে কিন্তু খরচ কম, লাভের পরিমাণ বেশি। খাবার দেওয়ার দরকার হয় না। তার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত যুবকরা মুক্তা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কেউ কেউ শুরুও করেছেন। সুজন হাওলাদারের ফুফাতো ভাই বরিশাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া হাসান জনি মুক্তা চাষ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কিভাবে মুক্তা চাষ করে এমন ভিডিও দেখে সুজন ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে শুরু করেছি। পরে ময়মনসিংহ মুক্তা চাষ ইনস্টিটিউটে গিয়ে হাতেকলমে শিখে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছি। একটা ঝিনুকে খরচ হয় ৩০-৩৫ টাকা। বিক্রি হয় ৩৫০-৪০০ টাকা।’
মুুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের কৃষি বিভাগের প্রভাষক বিধান সাহা বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষ লাভজনক। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
Advertisement
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারিভাবে মুক্তা চাষকে ছড়িয়ে দিতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলের যুবকরা আগ্রহ দেখালে সহযোগিতা করবো।’
কাজী সাঈদ/এসইউ/এমকেএইচ