ধর্ম

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বনবির শিক্ষা

ইসলামে স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখার বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান বিশ্বময় করোনা পরিস্থিতির কারণে এদিকে আরও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

Advertisement

আল্লাহপাক একমাত্র তার ইবাদত করার লক্ষ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর সুন্দরভাবে ইবাদত করার জন্য শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। একজন সুস্থ্য মানুষই সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে আমাদের শরীরের প্রতি যত্নবান হতে হবে। শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিভিন্নস্থানে তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু মালেক আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম)

Advertisement

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলামে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে এরূপ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ইসলামে  ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, ঘরের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা-ঘাটের পরিচ্ছন্নতাসহ এমন কোনো দিক নেই যা থেকে এ বিষয়টি বাদ পড়েছে। পরিচ্ছন্নতার ওপর ইসলাম যে এতবেশি গুরুত্বারোপ করেছে; এর কারণ কী?

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দেয়ার মূল কারণ হলো- আমরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে আমরা সুস্থ থাকব, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একমাত্র অপরিচ্ছন্নতার কারণেই শরীরের রোগ ব্যাধি দানা বাধে। এমন অনেকে আছেন- যারা নিয়মিত গোসল করে না, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করে না। ফলে কী হয়?

এতে শরীরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন প্রকার ছোট ছোট রোগ দেখা দেয়, আর এই ছোট ছোট রোগগুলোই একদিন বড় আকার ধারণ করে। যদিও সুস্থ থাকার জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো শেষ নেই।

Advertisement

পৃথিবীতে সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য আমাদের কত আকুতি, কত পরিশ্রম, কত সাধনা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যে পথে সুস্থ থাকা যায় তার সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে আজ বিশ্বে এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে; যেগুলো থেকে পরিত্রাণের আর কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মনে রাখতে হবে

জীবনের বড় একটি সম্পদ সুস্থতা। সময় থাকতে এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আমার উম্মত! পাঁচটি সম্পদ হারানোর আগে তার মর্যাদা দাও। তাহলো-

- মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাও।

- বুড়ো হওয়ার আগে যৌবনকে কাজে লাগাও।

- দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার মূল্য দাও।

- অসুস্থতার আগে সুস্বাস্থ্যকে মূল্য দাও।

- ব্যস্ততার আগে অবসরকে কাজে লাগাও।’ (মুসতাদরিকে হাকেম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্বাস্থ্য তথা সুস্থতাকে মর্যাদা দেয়ার কথা বলেছেন। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আর নিজেদের সুস্থতায় বার বার এ দোয়া পড়তে উম্মতে মুহাম্মাদিকে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সব সময় এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি-

اَللَّهُمَّ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْهَمِّ وَ الْحُزْنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسْلِ وَ ضَلْعِ الدَّيْنِ وَ غَلَبَةَ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসলি ওয়া দালয়িদ দাঈনি ওয়া গালাবাতির রিঝালি।'

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি অস্থিরতা, চিন্তা, নিরুপায় অবস্থা, অলসতা ও অসুস্থতা, ঋণের বোঝা এবং লোকদের দ্বারা আমাকে পরাজিত করা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থণা করছি।' (বুখারি, মুসলিম)

তিনি আরও বলেছেন, স্বাস্থ্যকে কাজে লাগাও, স্বাস্থ্যকে রক্ষা করো। আল্লাহর নবি তার এক সাহাবিকে ডেকে বললেন- হে আমার সাহাবি, জেনে রাখ, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে।’ (বুখারি)

এ সাহাবি যিনি সারাদিন রোজা রাখতেন আর সারারাত নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শরীরের হক আদায় করার কথা বলে সুস্বাস্থের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। যেন ধারাবাহিক রোজা পালন এবং রাতভর নামাজ আদায়ের কারণে অসুস্থ হয়ে না যান।

সুতরাং এ হাদিস থেকেও বুঝা যায়, ইসলাম এমন কিছু করতে বলে না; যা থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আমরা যদি সব কিছু ভুলে গিয়ে শুধু দিন-রাত ইবাদতে মগ্ন থাকি আর শরীরের প্রতি, ঘর-সংসারের প্রতি, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি খেয়াল না রাখি তবে কী মহান আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হবেন?

‘না’, মোটেও না। আমাদের ইবাদত, ঘর-সংসার সব কিছুই করতে হবে এবং স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। সুস্বাস্থ্য মূল্যবান সম্পদ। শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বস্থির ওপরই একাগ্রচিত্তে ইবাদত নির্ভরশীল। হাদিস শরিফেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে জোর তাগিদ এসেছে-

- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ পাকের দু’টি বিশেষ নেয়ামত সম্পর্কে খুবই অমনোযোগী। একটি হলো স্বাস্থ্য। আর অপরটি হলো অবসর।’ (বুখারি ও তিরমিজি)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন উত্তম এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।’ (মুসলিম)

ইসলামের দৃষ্টিতে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে সর্ব প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তাহলো- তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (তিরমিজি)

এছাড়া রোগাক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেয়ার তাগিদও দিয়েছে ইসলাম। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতেন এবং বলতেন-

‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা নাও, কেননা মহান আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি; যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাহলো বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করুন। হাদিসে বর্ণিত সুস্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম