অর্থনীতি

রফতানি কমে আসা পোশাক শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ : বিজিএমইএ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলতি বছরের মার্চ-জুলাই পর্যন্ত সময়ে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রফতানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবারও হুমকির মুখে পড়ে।

Advertisement

গত বছরের অক্টোবরে একইসময়ের তুলনায় রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর নভেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত সময়ে হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ, যা এই শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে নতুন সহায়তা প্রদান শিল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এই শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রধান বাজারগুলোতে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অক্টোবর মাসে আবারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব হিসেবে আমরা দেখছি। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি ও জাপানে পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ।

Advertisement

আমরা ব্যবসা পরিস্থিতি, বিশেষ করে ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্যাদি পাওয়ার জন্য ১৯ মার্চ একটি অনলাইন পোর্টাল খুলি, যেখানে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিতের তথ্য প্রদান করেন। এপ্রিলের শেষ নাগাদ ১১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এ পোর্টালে ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের তথ্য প্রদান করেন, যার মাধ্যমে ৬৫টি দেশের প্রায় ১৩০০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য পাওয়া যায়।

ওই সময়ে আমরা একটি পোর্টালও খুলেছিলাম, শুধুমাত্র ওই সব কারখানার জন্য যারা দেউলিয়াত্ব ঘোষিত ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের ব্যবসার যাবতীয় তথ্য ওই পোর্টালে শেয়ার করতে পারে। মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচের ভিত্তিতে বিজিএমইএ কর্তৃক ক্রমাগত যোগাযোগ ও চাপ সৃষ্টির ফলে জুন-আগস্ট সময়ে বাতিলকৃত ক্রয়াদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ পুনর্বহাল সম্ভব হয়, যদিও কারখানাগুলোকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল ক্রেতাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক ধরে রাখা।

সারা বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রয়ে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে লকডাউনের প্রভাবে খুচরা বিক্রয় ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমছে, যার প্রভাবে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি ও রফতানি মূল্য উভয়ই কমছে। বিগত কয়েক মাসে ইউরোপে খুচরা বিক্রয় হ্রাসের হার কিছুটা কমে, অর্থাৎ আগস্টে মাইনাস ৫ শতাংশ হয়, যা সেপ্টেম্বরে দাঁড়ায় মাইনাস ১৩ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৪-২০১৯ এই ৫ বছরে আমাদের পোশাক রফতানি মূল্য হারিয়েছে গড়ে বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে সমগ্র পৃথিবীতে আমাদের পোশাকের দরপতন হয় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই দরপতন ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। দরপতনের এই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রেখে সামগ্রিক বিশ্ব বাজারে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ড. রুবানা হক বলেন, পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে পোশাক শিল্পের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আমাদের একা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সম্পৃক্ততা ও চাপ অব্যাহত রেখে কাজ করছি। তারপরও শিল্পের সুরক্ষার জন্য এ মুহূর্তে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে নতুন সহায়তা প্রদান শিল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

ইএআর/এআরএ/এমএস