কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটি একটি দুর্ঘটনা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এটি লক্ষ্য করছে এবং এটি দুঃখজনক।’
Advertisement
রোববার (৬ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান এর সৌজন্য সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এটি কি আসলেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপটে ভাস্কর্য ভাঙচুর, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘একটা ঘটনা যেহেতু ঘটেছে সেহেতু এটাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলব। এখানে তো সমগ্র মানুষ অংশগ্রহণ করে নাই। পুরো জাতির সেন্টিমেন্ট তো আপনারা দেখছেন, আমি দেখছি। গোটা জাতির সেন্টিমেন্ট হলো বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা রক্ষা করা, তাকে স্মরণে রাখা।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং মানুষের ভাগ্যের উন্নতির জন্য তিনি সবসময় লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করেছেন। ওনার দর্শন আজকে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছেন বলে বাংলাদেশ আজ হতদরিদ্র দেশ নয়। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র ছিল। মানুষ বলতো ‘মাগো সারাদিন কিছু খাইনি আল্লাহর ওয়াস্তে চারটা ভাত দাও’ আমি শুনতে শুনতে বড় হয়েছি।
Advertisement
মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষ খেয়েপড়ে ভালো আছে। সেটা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কারণে, তার দর্শনের কারণে, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কারণে। এখন আমরা যদি তার সম্মান রক্ষা না করতে পারি তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধুকে অপমান করলে তার কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। বঙ্গবন্ধুর হত্যার কারণে বঙ্গবন্ধু ক্ষতিগ্রস্ত হননি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০০ সালেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হতো। ফলে বঙ্গবন্ধু ক্ষতিগ্রস্ত হননি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা।’
হেফাজতকে আওয়ামী লীগই আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্নভাবে কথা বলা যাবে। আমাদের কে কোন দল করে না করে তার চেয়ে বড় পরিচয় সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সকল নাগরিককে সরকার যথাযথ মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করে। এই দর্শন বঙ্গবন্ধুর দর্শন। অকারণে এটাকে কেউ অপব্যবহার করলে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের তার দর্শন থেকে সরে যাওয়া ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, এরকম ভাস্কর্য তো তুর্কি মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের আছে, সৌদি আরব, আরব আমিরাতে তাদের হিস্ট্রিকাল ভাস্কর্য আছে। সেগুলো সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে চাইনা। যেহেতু একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় কিছু সংখ্যক লোক বা ব্যক্তিবিশেষ ঘটনা ঘটায় সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলে। এখন বিচ্ছিন্ন ঘটনার ডেফিনেশন তো অবশ্যই বোঝাতে পেরেছি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুকে পুরো জাতি সম্মান করে। তার সম্মানের বিষয়ে পুরো জাতিই ঐক্যবদ্ধ।
কুষ্টিয়ার ঘটনার পর কী সরকার মনে করছে দোলাইড়পারের ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরে আসা উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা দেশ জাতি মানুষের অভিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং সেখানে সবসময়ই কমবেশি কিছু প্রতিকূলতা থাকে। সেই প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সরকার সচেষ্ট।’ হেফাজতের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা গভীরে গিয়ে দেখার বিষয় নয়। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় এবং সম্মান আছে। আমার মনে হয় না এটাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবারই ভালোবাসা আছে।
Advertisement
এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়। এর প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে রোববার ভাস্কর্য ভাঙচুরের একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায় কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কাজে দুইজন অংশ নেন। দু’জনই দাড়িওয়ালা। টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুজনের মধ্যে একজনের পিঠে ব্যাগ ঝোলানো রয়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইএইচআর/এসএইচএস/এমএস