ফিচার

‘স্বাধীনতা চত্বর’ মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক

মো. বাবুল হোসেন

Advertisement

ডিসেম্বর বাঙালির গৌরব, আনন্দ ও আবেগের মাস। বাঙালি জাতি তাদের মুক্তি ও স্বাধিকারের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর সাথে সংগ্রাম করেছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে এদেশীয় কিছু বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌলার পতনের মধ্যদিয়ে ব্রিটিশরা উপমহাদেশে ১৯০ বছর শাসন কায়েম করে। ১৯৩৯ সালের ধর্মের ভিত্তিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ তখনো পাকিস্তানের কাছ থেকে প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। বাঙালিরা রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, চাকুরির অধিকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছিলো।

১৯৫২ সালে ভাষার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ধাপে ধাপে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হই। পৃথিবীর ইতিহাসে এতো অল্প সময়ের মধ্যে বিজয় অর্জন খুব কমই দেখা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে সময় লেগেছিল ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর। আবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিদের জন্য ১৯৪৮ সালে তাদের নিজেদের ভূখণ্ডে তাদের জন্য একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব পাস হয় ৪৫% ভূমি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৭২ বছরেও ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালিরা সংগ্রামী জাতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র স্থান করে নিতে পেরেছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। তেমনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে ‘স্বাধীনতা চত্বর’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। ভাস্কর্যকে ঘিরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে। ভাস্কর্যটিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা খুব সুচারুভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির শিল্পী শ্যামল চৌধুরী। ভূমি থেকে ৫২ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে, বৃত্তাকার ৬ টি ধাপ বাঙালির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ৬ টি ধাপ আবার ৭ ফুট উচ্চতায় গঠিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে নির্দেশ করা হয়েছে। ভাস্কর্যটি ৭১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭১ ফুট প্রস্থ ভূমির উপর নির্মিত যা স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে বিজয় অর্জনকে নির্দেশ করা হয়েছে। স্বাধীনতা চত্বরের সামনের দিকে তাকালে বেদির উপর প্রায় ১৬ ফুট উচ্চতায় অনেকগুলো হাত উপরের দিকে তুলে ধরে আছে ২৬ ফুট উচ্চতার দুটি হাতকে। ভাস্কর্যের একেবারে উঁচুতে নর-নারীর দুটি হাত ৪ টি কপোতকে মুক্ত করে দিচ্ছে। যা একটির মাধ্যমে মুক্তি এবং অন্যটি দ্বারা ৭২ সালের সংবিধানের ৪ টি মূলনীতিকে নির্দেশ করা হয়েছে।

Advertisement

বেদীসহ মূল ভাস্কর্যের পেছনে বৃত্তচাপ সদৃশ ২টি দেয়াল আছে, যা মূল ভাস্কর্যটিকে ২টি হাতের ন্যায় আগলে রেখেছে। দেয়াল দুটিতে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ৬২ এর ছাত্র আন্দোলন’ ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালোরাত্রি, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন,৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে।

লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা।

এইচআর/এমএস

Advertisement