বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী। এ ঘটনায় মামলা করায় আসামিদের যোগসাজশে গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে প্রায় চার মাস ধরে একঘরে হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে তার পরিবার। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ মামলাটি আপস-মীমাংসার নামে বাদির কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষরও করে নিয়েছেন তারা।
Advertisement
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই নানার বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল ওই কিশোরী। এদিন ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল হক বাবুর সহযোগিতায় গ্রামের রাস্তা থেকে তাকে অপহরণ করেন একই গ্রামের মাসুদ রানা নামের এক যুবক। এ ঘটনায় ভুুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদি হয়ে ১২ আগস্ট থানায় মামলা করেন। মামলায় মাসুদ রানা ও ফজলুল হকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য কিশোরীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেয়। পরে হুমকিতে কাজ না হলে অভিযুক্তরা গ্রামের মাতব্বর পান্না সরকার, আবু সাইদ ও সোলায়মান আলীর যোগসাজশে ২০ জুলাই মেয়েটির পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতার কিংবা কিশোরীকে উদ্ধারে থানা পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি বলে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করেছে। এ অবস্থায় ২৫ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরীকে সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেন তার স্বজনরা। উদ্ধারের পর ওই তার ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে।
মামলার বাদি ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বলেন, ‘মেয়েকে অপহরণের পর গ্রামের মাতব্বররা বৈঠক করে আমাদের একঘরে করে রেখেছেন। আমাদেরকে গ্রামের কোনো বাড়িতে যেতে দেয়া হয় না। গ্রামের কোনো মানুষ আমাদের বাড়িতে আসে না। গত কোরবানির দিন (১ আগস্ট) আমাদেরকে মাংস দেয়া হয়নি। তবে হাট-বাজার কিংবা ফসলের মাঠে যেতে কোনো বাধা নেই।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আহসানুল হক আসামিদের গ্রেফতার ও বাদিকে সহযোগিতা করতে কোনো ভূমিকা রাখেননি। মেয়েকে উদ্ধারের পর থেকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মামলা তুলে নিয়ে মীমাংসা করতে চাপ দেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজেও স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়েছি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) আহসানুল হককে থানা থেকে বগুড়া পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্তের ভার ওসিকে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দেউড়িয়া গ্রামের মাতব্বর পান্না সরকার বলেন, ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবারটিকে একঘরে রাখার কথা শুনেছি। তবে ওই বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম না।
উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার বলেন, পরিবারটিকে একঘরে করে রাখার খবর পেয়ে কয়েক দিন আগে ওই গ্রামে যান তিনি। সেখানে গিয়ে পরিবারটিকে আগের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবারটিকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এমএসএইচ/জেআইএম