বিশেষ প্রতিবেদন

সরকার ভারত বা চীনমুখী নয়, সম্পূর্ণভাবে দেশের জনগণমুখী

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর বিষয়ক সম্পাদক। সরকারের পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র।

Advertisement

আলাপে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্কের আলোকপাত করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন বলেই বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দরকষাকষি করা সম্ভব হচ্ছে। কূটনৈতিক সম্পর্কে শেখ হাসিনা দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন বিপ্লব বড়ুয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষ একটি বাঁক নিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে ভারত এবং চীন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, তা আগে সাধারণত দেখা যায়নি। আপনার কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা আছে কি-না?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : বিশ্ব রাজনীতিতে একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, তা নির্ধারণে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ম্যাচিউরিটি (পরিপক্বতা) এবং ভারসাম্য নীতির পরিচয় দিয়েছেন সেটি এ সময়ে আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক দেখাতে পারেননি।

Advertisement

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটু পেছনে ফিরতে হবে। একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে সেই দেশের জনস্বার্থ রক্ষা করা। অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা এমনকি সাংস্কৃতিক স্বার্থও এই জনস্বার্থ সম্পৃক্ত। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ‘গোল্ডেন রুল’ আমাদের জাতির পিতা নির্দিষ্ট করেছিলেন- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে ‘পলিসি বেসড’ কোনো রাজনীতি হয়নি। রাষ্ট্রের একটি সুনির্দিষ্ট নীতি থাকে, যা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতি ক্রমাগত এগিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ মূলত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সর্বত্র অপমানিত, অপদস্ত হতে থাকে। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ সমর্থন জুগিয়েছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। বাঙালি নিধনে যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহরও পাঠিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ আমাদের পক্ষে ছিলেন। সমর্থন করেছেন।

জাগো নিউজ : এটি হয়তো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্থার কারণেই...

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : হ্যাঁ, এটি সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের লেজিটিমেসি আর পর্বতসম ব্যক্তিত্ব এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসতে বঙ্গবন্ধু যাত্রাবিরতি করেন লন্ডনে। তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির এডওয়ার্ড হিথ। ওইদিন তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন। তিনি যখন জানলেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আসছেন, তখন তার কর্মসূচি বাতিল করে লন্ডনে চলে আসেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজে বঙ্গবন্ধুর গাড়ির দরজা খুলে অভ্যর্থনা জানান। এটি একটি বিরল সম্মান। আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন, পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলন এবং জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে দৃঢ়তার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, তা বিশ্বনেতাদের কাছে ছিল ঈর্ষণীয়। বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করতেন বিশ্বনেতা মেনেই।

Advertisement

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তিকে অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য মনে করেন বিশ্লেষকরা

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে ওআইসির সম্মেলনের আগে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাঁচজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাতে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতিও দেয়। ওআইসির সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বিমানবন্দরে এসে অভ্যর্থনা জানান। এই আলোচনাগুলো প্রাসঙ্গিক এই কারণে যে বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু কীভাবে সম্মানিত হয়েছেন, বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন। একজন রাষ্ট্রনায়ক নিজে সম্মানিত হয়ে কীভাবে দেশ এবং দেশের মানুষকে সম্মানিত করা যায়, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭৫ সালের পর সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধানকে পদদলিত করে গণতান্ত্রিক ধারাকে স্তব্ধ করে দেয়। ওই সময় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, তা সামরিক স্বৈরশাসকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে হয়েছে। গণমানুষের রায়ের প্রতিফলন ছিল না।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি দেশ এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করতে থাকেন। তখন রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো প্রকার পলিসি ছিল না। শেখ হাসিনা সে পলিসি নির্ধারণ করেছেন। একটি জাতির সামনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে চলতে হয়, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই কাজটিই সঠিকভাবে করে চলেছেন।

জাগো নিউজ : আলোচনা হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে…

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, এর মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঐতিহাসিক। ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মূল্যায়ন করলে ভুল হবে। রুটিনমাফিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চেয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কারণ অনেক বড়। বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারতের সীমানা। এই প্রতিবেশী সম্পর্ক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিপদে-আপদে প্রতিবেশীই সবার আগে এগিয়ে আসে।

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায়

ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলো আমরা সম্মানজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে সমাধান করে চলেছি। যেমন ছিটমহল সমস্যার সমাধান । গঙ্গার পানির হিস্যা আমরা সঠিকভাবে মেটাতে পেরেছি। সমুদ্র সীমানার যে বিজয়, সেটা বঙ্গবন্ধুকন্যার কারণেই সম্ভব হয়েছে। সমুদ্র বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

জাগো নিউজ : চীন প্রসঙ্গে কী বলবেন?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : চীন অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বে এখন পরাশক্তি। চীন গোটা বিশ্বে বিনিয়োগ করে চলছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের একটি ভূমিকা আছে। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশে এসেছিলেন উন্নয়নের বার্তা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বন্ধুত্বের বার্তা নিয়েই চীনে গেছেন।

চীন এমন একটি রাষ্ট্র এখন, যাকে শুধু সামরিক শক্তির বিবেচনায় মূল্যায়ন করলে চলবে না। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম নেতৃত্ব। বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানতম অংশীদার এখন চীন। বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য চীনে যায়, তার ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত। এ সুবিধার কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে বিশেষ তুষ্ট করার জন্য কিছু করেন না। দেশের জন্য, মানুষের জন্যই তিনি সব করছেন।

জাগো নিউজ : সমালোচনাও আছে।

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : সমালোচনা থাকবেই। সমালোচনার সিঁড়ি মাড়িয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কোনো ফোরামে অংশ নিলেই শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। শেখ হাসিনার এই সম্মান অনেকগুলো কারণেই বাড়ছে।

তার নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, তা অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে সাকসেস স্টোরি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ আর তলাবিহীন রাষ্ট্র নয়। এটি প্রমাণিত। বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জোর গলায় কথা বলতে পারে। বিশ্ব শান্তির পক্ষে তার যে অবস্থান, তা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা মানবিকতার যে নজির স্থাপন করেছেন, তা কেউ সাহস করেনি। উন্নত বিশ্বও এমন উদারতা দেখাতে পারেনি। যদিও রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা প্রশ্নে রোহিঙ্গারা হুমকি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এমন ঝুঁকি জেনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, ভাসানচরে অত্যাধুনিক বাড়ি নির্মিত হয়েছে তাদের জন্য। বাসস্থান এমনকি খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা একটি আঞ্চলিক সমস্যা ছিল। শেখ হাসিনা তার দৃঢ়তা আর নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আজ এটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রূপ দিয়েছেন। আজ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি হচ্ছে, এটি সম্ভব হচ্ছে আমাদের সরকারপ্রধানের নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ

সরকারের সমালোচনা করতে অনেকেই অভ্যস্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমি দেখি না, তারা সরকারের এমন কূটনৈতিক সফলতা নিয়ে প্রশংসা করছেন।

জাগো নিউজ : ভূ-রাজনীতির প্রশ্নে বাংলাদেশ বরাবরই ভারসাম্যহীন কূটনীতিতে অবস্থান করে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এখন কী বলবেন?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : না। এ অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। পূর্বের সরকারের সময় কোন নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা এই বিশ্লেষকরাই ভালো দিতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময়ই বাংলাদেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ আর ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখেছে।

এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি পরিবর্তিত হচ্ছে ক্রমাগতভাবে। শেখ হাসিনা পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামলে নিয়েই কূটনীতিতে মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো মহলকে তুষ্ট করতে এ সরকার কারও সঙ্গে চুক্তি করেনি।

জাগো নিউজ : শেখ হাসিনার সরকার ক্রমশই চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে বলে ভারতের গণমাধ্যম সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। চীন-বাংলাদেশ ‘খয়রাতি সম্পর্ক’ বলেও অবজ্ঞা করছে তারা। এ নিয়ে দলের কোনো প্রতিক্রিয়া?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : কারা এমন প্রশ্ন তুলছেন, তা আমার জানা নেই। নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে চীন সফরে যান। প্রটোকল ভঙ্গ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার নিজ গ্রামে নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানান। এটি ছিল নরেন্দ্র মোদির বিশেষ সম্মাননা, যা বিশেষ সম্পর্ককে নির্দেশ করে। নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটেও চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক চমৎকার। উন্নয়ন, অর্থনীতির প্রশ্নেই ভারত-চীনের মধ্যকার সম্পর্ক।

বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। উন্নয়ন, অর্থনীতির প্রশ্নে আমাদের স্বকীয়তা আছে। নিজস্বতা আছে। ভারত-চীনের মধ্যকার এখনকার সম্পর্ক নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সবার আগে আমার দেশের স্বার্থ। আমার দেশের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, কূটনীতি কী হবে, তা আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই নির্ধারিত হবে। অন্য দেশের মিডিয়া কী বলল, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই।

জাগো নিউজ : লাদাখের ঘটনায় ভারত-চীনের উত্তেজনা চলছে এখনও। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কও ভালো। বাংলাদেশ কোন দিকে...

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : আমরা চাই সারাবিশ্বেই শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করুক। বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে। শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হলে কেউ ভালো থাকবে না। অশান্তি বিরাজ করলে আমাদেরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। ভারতে বিপর্যয় ঘটলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিবেশী।

অন্যদিকে চীনও আমাদের ভালো বন্ধু। তারা উন্নয়ন সহযোগী। মূলত যাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা মধুর রাখতেই হবে। যেমন মধ্যপ্রাচ্যে বা আরব অঞ্চলে আমাদের প্রচুর শ্রমিক রয়েছে। সেখানে অস্থিরতা থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ ব্যাহত হবে। এ কারণে কোনো দেশে প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক বিপর্যয় কোনোভাবেই আমাদের প্রত্যাশিত নয়।

ভারত-চীনের মধ্যকার যে সাময়িক উত্তেজনা, তা আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। যে কোনো সমস্যাই আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। প্রয়োজনে জাতিসংঘ বা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নেয়া যায়। সীমান্তে কোনো বিরোধ থাকলে আন্তর্জাতিক আইনের মধ্য দিয়েই সমাধান করা সম্ভব, যা অনেক দেশের ক্ষেত্রে হয়েছে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সময়। এমন সময়ে মানবসৃষ্ট কোনো অস্থিরতা-অশান্তি কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। করোনা ভ্যাকসিনের জন্য ভারত-চীন উভয়ই বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে চাইছে। এটি ভালো খবর। প্রতিবেশীর নিজস্ব স্বার্থে আঘাত হানে এমন কোনো বিষয়েও বাংলাদেশ আগ্রহ দেখায়নি।

জাগো নিউজ : শেখ হাসিনার সরকার চীন এবং ভারতের সঙ্গে যেভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলছে, তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রভাবিত হতে পারে কি-না?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন। এখানে কোনো দ্বৈতনীতি নেই। যে কারণে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রভাবিত হবে, তা মনে করি না। আমরা প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থকে শ্রদ্ধা করি। সরকার ভারত বা চীনমুখী নয়, সম্পূর্ণভাবে দেশের জনগণমুখী। আমাদের জাতীয় স্বার্থ যেভাবে সংরক্ষিত হয়, সে আলোকেই শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার ভারত বা চীনমুখী নয়, সম্পূর্ণভাবে দেশের স্বার্থ ও জনগণমুখী, মনে করেন বিপ্লব বড়ুয়া

আমাদের দেশের কোনো কোনো মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভারত বা চীনের সঙ্গে সরকারের চলমান সম্পর্ক নিয়ে পানি ঘোলা করতে চাইছেন। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তারা এটি করছেন। আমরা এই উদ্দেশ্য হাসিল হতে দেব না। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতেই ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির আলোকে আমরা কাজ করছি।

বিএনপি-জামায়াতের মতো সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে না। বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতায় তখন ভারত সফরে গিয়ে খালেদা জিয়া গঙ্গার পানির সমস্যার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা এই সমস্যার সমাধান করেছেন। সমুদ্র সীমানায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

চীনের সঙ্গে তাদের মধুর সম্পর্ক বলে বিএনপি সব সময় দাবি করে। কিন্তু তারা বাংলাদেশে তাইওয়ানের বাণিজ্যিক বিভাগের অফিস খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা চীনকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। বিএনপির এমন অসংখ্য ভুলে ভরা নীতির কারণেই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। আজকে শেখ হাসিনার জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। বিশ্ব রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিশেষ গুরুত্ব আছে বলেই চীন-ভারত উভয়ই বাংলাদেশকে এখন অধিক মূল্যায়ন করে। আমরা সবার সঙ্গে সম্প্রীতিপূর্ণ শান্তিপূর্ণ বন্ধুত্ব চাই।

এএসএস/এইচএ/এমকেএইচ