ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরে অবস্থিত গোপালপুর ঘাট। অন্যদিকে দোহার উপজেলার কার্তিকপুর এলাকায় অবস্থিত মৈনট ঘাট। প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে পদ্মা নদীর এ রুটে। কিন্তু নাব্য সংকটে গোপালপুর-মৈনট দিয়ে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
Advertisement
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য সংকট কাটিয়ে পুনরায় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। যদিও ঘাট ইজারাদার পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটে ও অপর পারের চর মৈনট পয়েন্টে দু’টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী খনন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নদীতে জোয়ার-ভাটার কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সরেজমিনে উপজেলার গোপালপুর ঘাট ঘুরে জানা যায়, উপজেলা সদরের গোপালপুর ঘাট থেকে পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার পদ্মা নদীর বুকজুড়ে বালু মাটির উঁচু ডিবি। চরের পদ্মা পাড় পয়েন্টে ঘাট ইজারাদাররা নিজস্ব অর্থায়নে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খননের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পদ্মা নদীর জোয়ার-ভাটার কারণে প্রায়ই যাত্রী পারাপারে ট্রলার ও স্পিডবোটগুলো চলাচল করতে পারছে না।
প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে যাত্রীদের ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে হচ্ছে। সঙ্গে থাকা মালামাল ও বাচ্চাদের নিয়ে দুর্গম বালুচরের মধ্যে হেঁটে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ।
Advertisement
রাজধানী ঢাকা থেকে ফেরা যাত্রী রাশেদ খান (৫৫) জানান, স্পিডবোটের ভাড়া তো ১৭০ টাকা ঠিকই দিলাম, কিন্তু ২০ মিনিটের পদ্মা পার হতে সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। আবার প্রায় এক কিলোমিটার বালুচর হেঁটে আসতে হয়েছে।
ঢাকাগামী যাত্রী কল্পনা আক্তার (৩২) বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে ট্রলারে উঠতে হবে। সঙ্গে দুই বছরের শিশু ও ব্যাগ রয়েছে। এরপরও চর জেগে ওঠায় ট্রলার অনেক পথ ঘুরে যাওয়ায় সময় বেশি লাগে। এই রুট দিয়ে যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই।
চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্যা জানান, দীর্ঘকাল ধরে উপজেলার গোপালপুর-মৈনট নৌরুট দিয়ে আশপাশের নগরকান্দা, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলাসহ অত্র এলাকার হাজারো যাত্রী প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। সম্প্রতি নাব্য সংকটের কারণে এই রুটে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে স্পিডবোটে উঠতে হচ্ছে।
যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সরকারিভাবে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
Advertisement
ঘাট ইজারাদার বাবুল শিকদার জানান, গত বছর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে গোপালপুর-মৈনট ঘাটটি ৬ কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা মূল্য দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঘাটের মূল ডাক ৫ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা, ভ্যাট ৭৮ লাখ ২২ হাজার ৬৫০ ও আয়কর ২৬ লাখ ৫৫০ টাকা।
তিনি আরও জানান, এত টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নেয়ার পর করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সরকার এই রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখে। এখন আবার পদ্মার পাড় শুকিয়ে এক কিলোমিটার এলাকায় উঁচু বালুচর। ঘাটে আগের চেয়ে এখন যাত্রীও অনেক কমে গেছে।
বাবুল শিকদার জানান, এ বছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট বরাবর পদ্মার মাঝে ড্রেজিং করে। ড্রেজিংয়ের ফলে গোপালপুর ঘাটের পদ্মা পাড়ে আরও বেশি পরিমাণ বালুচর পড়েছে। ঘাটটি চালু রাখার জন্য নিজেদের খরচে পদ্মা নদীর দু’পাড়ে দু’টি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত খরচ করছেন। কিন্তু জোয়ার-ভাটার কারণে তাতেও বিঘ্ন ঘটছে। ফলে এ বছর বড় অংকের লোকসান গুনতে হবে তাকে।
ঘাটটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি।
চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, গোপালপুর-মৈনট নৌরুটের ইজারা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে দেওয়া হয়। ইজারা দেওয়ার সময় চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে নাব্য সংকট হলে ড্রেজিং ইজারাদারকেই করতে হবে। এরপরও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
বি কে সিকদার সজল/এসজে/এমকেএইচ