ফিচার

বিজয়ের মাসে তরুণদের ভাবনা

ডিসেম্বর, অহংকার আর গৌরবের মাস; বিজয়ের মাস। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা শোভিত এ দেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, নানা চ্যালেঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল দেশের তরুণ সমাজ। বিজয়ের মাসে কী ভাবছেন বর্তমান তরুণরা? কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের ভাবনা জানাচ্ছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ—

Advertisement

আমজাদ হোসেন হৃদয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের এ বিজয় কেবল একটি জাতীয় পতাকা বা স্বাধীন একটি ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বৈষম্যহীন দেশ গঠনের প্রেরণা এ বিজয়। মুক্তিযুদ্বের মূলনীতি ছিল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। সুদীর্ঘ ৪৯ বছর একটি জাতির জন্য কম সময় নয়, কিন্তু সুদীর্ঘ এ সময়ে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশাই পূরণ হয়নি। ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য ও প্রশ্নফাঁস শিক্ষাখাতে কাঙ্ক্ষিত অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশজুড়ে মাদকের ছড়াছড়ি তরুণ সমাজকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। তাই স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুফল পেতে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। তাই তো বিজয়ের অর্ধশত বছরেও আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে; যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ হাসি ফোটাবে। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি, থাকবে না কোনো অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ।

আব্দুস সবুর লোটাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিজয় শব্দটি শুনলেই আনন্দ লাগে। যেকোনো বিজয়ই সাধারণভাবে আনন্দের হয়। তবে এ বিজয়ের পেছনে রয়েছে বৃহৎ সংগ্রামের ইতিহাস। ডিসেম্বর এলেই বিজয় দিবসের আনন্দের বাতাস বয়। এ আনন্দের জন্য প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। অনেকে সম্ভ্রম হারিয়েছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ, ক্ষুধা ও বৈষম্যহীন একটি সুন্দর দেশের। আমরা সেই বীরদের আত্মত্যাগের কথা কোনোদিন ভুলব না। গভীর শ্রদ্ধায় তাদের স্মরণ করবো। যেন তাদের আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে পারি। সেই সাথে দ্রুতই মুক্তিযোদ্ধাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হোক।

অনন্য প্রতীক রাউত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Advertisement

৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ ৭৬ হাজার মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের এ বিজয়। যে পথ পরিক্রমায় অগ্রণী ভূমিকা ছিল তরুণদের। অন্যায়, অবিচার তথা পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন অবিরাম। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন জনতার সাথে। গড়ে তুলেছেন মুজিব বাহিনী। ধ্বংস করেছেন হানাদার বাহিনীর একের পর এক পরিকল্পনা। কষ্টার্জিত এ বিজয় তাই আমাদের অস্তিত্ব, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সে চেতনা বা দেশাত্মবোধ- এটাই চির প্রত্যাশা। এগিয়ে যাক প্রিয় মাতৃভূমি।

তাহমীদ হাসান শোভন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে। সেই থেকে বাঙালি পেয়েছে রাষ্ট্রের ৪টি উপাদানের অন্যতম প্রধান উপাদান নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে বাঙালির বিজয় নিশানটি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রেষারেষিতে প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য সাধারণ জনতা। বিজয়ের প্রায় অর্ধশত বছরে এসেও দেশকে সাক্ষী হতে হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার।

হিরা সুলতানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষ এগিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনতে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখনো দেখতে পাইনি। যেদিকে তাকাই শুধু ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশ। এ সংকট মোকাবিলা করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব। তাই তরুণরাই পারে এ দেশের হাল ধরতে। ফলে তরুণ প্রজন্মকে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব৷

মো. সোহানুর রহমান সোহান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বিজয়ের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে যেমন অসীম ঘাটতি, অসামঞ্জস্যতা আর অক্ষমতার দেখা মেলে; তেমনিভাবেই কতগুলো প্রাপ্তি আর শক্তির জায়গাও তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরা একটি বিজয় পেয়েছি এটি পরম গৌরবের। সামগ্রিকভাবে অনেক বেশি তৎপরতা প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় চাহিদার জায়গা তৈরি হয়েছে দেশের দুর্নীতি নির্মূলকরণে। মোদ্দাকথা, রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত হবে অগ্রসর বিষয়গুলোকে যথাযথ গতিতে রেখে অসামঞ্জস্যতার দিকগুলোয় কঠোর নজরদারি করে অর্জিত বিজয়কে সমুন্নত রাখা।

নিপা রানী সাহা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেই সূচনা হয় বাঙালির নবজীবনের। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে রাঙিয়ে রাতের অন্ধকার ভেদ করে বাংলার দামাল ছেলেরা কেড়ে এনেছিল ফুটন্ত সকাল। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় মাস এটি। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার মাস। করোনার কারণে হয়তো বিরাট আয়োজন সম্ভব হবে না। তবুও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি আজীবন স্মরণ করিয়ে দেবে আমাদের। জাগ্রত করবে বিজয়ের চেতনা। অর্ধশত বছরের প্রাক্কালে চলুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেই সমৃদ্ধ আগামীর পথে।

এসইউ/এমএস