আমাদের দেশে হাটে-বাজারে রেস্তোরাঁর চেয়ে ওষুধের দোকান বেশি। বিক্রিও রেস্তোরাঁর চেয়ে ফার্মেসিতে কম নয়। ধনী-গরিব সবার ঘরে-ঘরে ওষুধের বাক্স অথবা পলিথিনে মুড়ানো ওষুধের বস্তা আছেই। অনেক পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের তালিকা বা ব্যয় সংকোচন করে জরুরি ওষুধ কেনা হয়।
Advertisement
রোগ-অসুখ তো পৃথিবীর সব মানুষের কমবেশি থাকেই। কিন্তু আমাদের দেশে একটু বেশি। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। এর একটা উদাহরণ হচ্ছে, আমাদের মধ্যে যারা প্রবাসে থাকেন, তারা সেখানে কঠোর পরিশ্রম করেন। কেউ কেউ একটানা তিন/চার বছর থাকেন প্রবাসে। এর চেয়ে বেশি সময়ও একটানা থাকেন কেউ কেউ।
বিদেশে থাকাকালীন একজন প্রবাসী তিন/চার বছরে যে-পরিমাণ ওষুধ সেবন করেন একই সময়ে দেশে অবস্থান করা তার ভাই-বন্ধুরা এর বহুগুণ বেশি ওষুধ সেবন করেন। দেশে যে-পরিমাণ ওষুধ খেতে হয়, বিদেশে সে-পরিমাণ ওষুধ খেতে হলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ হ্রাস পেতো। কারণ, বিদেশে ওষুধের দাম বেশি। ভাগ্য ভালো বিদেশে এতো ওষুধ খেতে হয় না! তাই তো বাংলাদেশ বেশি-বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে প্রবাসীদের কাছ থেকে।
তো, আমরা কি এভাবেই চলব? ওষুধ খেয়ে-খেয়ে? বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ হবে তখনো কি এখনকার মতো ওষুধের ওপর থাকবো আমরা? হয়তো নয়। অবস্থার পরিবর্তন হবে মনে হয়। সরকার হয়তো আগামীতে অনেক অনেক উদ্যোগ নিবে যাতে নাগরিকদের রোগ-অসুখ কম হয়। এই যেমন- খাদ্যে ভেজালরোধ, শুষ্ক মৌসুমে নগর-শহর-উপশহর-পৌরসভার রাস্তায় পানি ছিটানো- যাতে ধুলাবালি ওড়া বন্ধ হয়, নগরে-শহরে এসি-বাসের ব্যবস্থা করা- যাতে মানুষ ঘামে অসুস্থ না-হয়, সিটি ও পৌর এলাকায় রাস্তার পাশে এবং ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোতে পানির লাইনের ব্যবস্থা করাসহ নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া যায়। নাগরিক সুস্থতার জন্য আরো কী কী করা যায়- সে মতো কাজ করবেন বলে আশা করছি আমাদের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্বে থাকা কর্তারা।
Advertisement
মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ প্রবাসজীবনে সে দেশে ওষুধের ফার্মেসি দেখেছি খুবই কম। হ্যাঁ, মোড়ে মোড়ে ফার্মেসি আছে। তবে সে-সব ফার্মেসিতে যে-সব ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যায় সে-রকম অল্পকিছু ওষুধ বিক্রি করা হয় কেবল। সাথে বিপুল পরিমাণে দেশি-বিদেশি কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করা হয় ফার্মেসিতে।
আমাদের দেশে ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে ওষুধের চাহিদা বেশি। ওষুধের চাহিদা হয় রোগ থেকে মুক্তির জন্য। তাই কী করলে মানুষের রোগ-অসুখ কম হবে সে চিন্তাই করতে হবে আমাদের। নকল ও ভেজাল ওষুধও এক বিরাট সমস্যা। দেখা যায় ওষুধের জন্য অর্থ যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভেজাল ও মানহীন ওষূধ খেয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে। এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
উন্নত বাংলাদেশের হাট-বাজারে রেস্তোরাঁর চেয়ে ওষুধের দোকান কখনো বেশি হতে পারে না ; হবেও না। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক বাংলাদেশের জনগণ। দেশে ওষুধের দোকানের প্রয়োজন কমে আসুক। বাড়ুক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁর সংখ্যা। আগামীর উন্নত বাংলাদেশের নাগরিকেরা হবেন উন্নত স্বাস্থ্যের অধিকারী এমন প্রত্যাশা তো করতেই পারি।
লেখক : সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক।
Advertisement
এইচআর/এমএস