হাসপাতালের বিছানায় মায়ের চাদর জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আট বছরের ছোট্ট শিশু রাব্বি। শিয়রে ঝুলছে আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের ব্যাগ। বিছানার পাশে শুয়ে উদ্বিগ্ন মা। সন্তানের যে হাতে স্যালাইন পুশ করা, সে হাতটা একটু নড়ে উঠলেই পরম স্নেহে দ্রুত হাত দিয়ে চেপে ধরে সরিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।
Advertisement
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাব্বির মা জানান, তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। বাসায় বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভোগায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। গত সাতদিন ধরে চিকিৎসা চলছে। গত কয়েকদিনে ছেলে কাহিল হয়ে পড়েছে। তার স্বামী স্বল্প বেতনে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। চিকিৎসা খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। কবে ছেলে সুস্থ হবে এ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শনে এ দৃশ্য দেখা যায়। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও তার মতো আরও তিনটি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় দেখা যায়।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালটিতে শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরাই নয়, তাদের পাশাপাশি করোনা ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদেরও চিকিৎসা চলছে।
Advertisement
হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল হাকিম জানান, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন অসুখ যেমন- জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নিয়ে বেশি রোগী আসছে। তবে ইনডোরে যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যে ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া ও করোনা রোগী রয়েছে।
আবদুল হাকিম আরও জানান, চলতি বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট ৮৭ জন শিশু ভর্তি হয়। তার মধ্যে গত এক সপ্তাহে ১০ জন ও চলতি মাসের প্রথম দুদিনে চার জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়।
ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে শিশু করোনা রোগীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। গত অক্টোবর মাসের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ জন, পাঁচ জন, ছয় জন ও ২১ জন। নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা যথাক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ জন, ২২ জন, ৩৫ জন ও ২৫ জনে দাঁড়ায়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, করোনার চেয়ে ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তারা করোনার চাইতে শিশুদের নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। হাসপাতালে রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র দিয়ে প্রতিদিনই শিশু রোগীদের সুস্থ করে তুলছেন তারা। তবে ঋতু পরিবর্তনের এ সময় শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের পরামর্শ দেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. রিজওয়ানুল হাসান বলেন, আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে গড়ে ১০০ জন থেকে ১২০ জন রোগী আসলেও বর্তমানে ৩২০ জন থেকে ৩৫০ জন রোগী আসছে। শিশুদের মধ্যে করোনা, ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ডায়রিয়া, ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির রোগী বেশি।
তিনি আরও বলেন, শুরুর দিকে করোনা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কম থাকলেও নভেম্বর মাসে প্রায় শতাধিক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। এছাড়া নিউমোনিয়াতেও প্রতিদিন ৩/৪ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এমইউ/এমআরআর/জেআইএম