জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায় বিয়ে। আর বাঙ্গালির বিয়ের আয়োজন মানেই উৎসবে ভরপুর প্রাণবন্ত আয়োজন। বর ও কনের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনালগ্নকে যুগ যুগ স্মরণীয় রাখতে বিয়ের আয়োজনকে ঘিরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকে পরিবার পরিজনের হাজারো জল্পনা-কল্পনা। করোনাকালে সবকিছু সীমিত হলেও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে চিন্তিত সবাই। সহজাতভাবে এ ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা নিয়ে টিপস দিয়েছেন দেশসেরা ইভেন্ট প্ল্যানার, মেকআপ আর্টিস্ট ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফার। এই সময়ে বিয়ে নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জুনায়েদ হাবীব-
Advertisement
কনের সাজসজ্জায় আভিজাত্যের যেমন ছোঁয়া: বর-কনে দুজনেরই চাওয়া এদিনটিতে যেন দুজনকেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায়। বিশেষ করে কনেরা চান নিজেদের ভিন্নভাবে সাজিয়ে তুলতে। এখন চলছে বিয়ের মৌসুম। এসময়কে ঘিরে কনেদের চলছে নানা প্রস্তুতি। তাই খেয়াল রাখতে হবে সাজসজ্জার অনেক বিষয়েই। গ্লো বাই মারিয়া মৃত্তিকের স্বত্বাধিকারী ও জনপ্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট মারিয়া বর-কনের সাজসজ্জার বিষয়ে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস। গায়ে হলুদ ও বিয়ের জন্য কনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মেকওভার ও আউটফিট।
গায়ে হলুদে কনের মেকআপের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল লুকের সাথে বোল্ড কালারফুল লিপস্টিকের ট্রেন্ড চলছে এখন। আগেরকার মতো হলুদের জন্য হলুদ রঙের আউটফিট না রেখে ভিন্নধর্মী লুকের জন্য মেজেন্টা, সবুজ, অরেঞ্জ এ ধরনের কম্বিনেশনের আউটফিট রাখা যেতে পারে। জুয়েলারির জন্য ফ্লাওয়ার জুয়েলারি রাখা যেতে পারে।
কনের হেয়ারস্টাইলের জন্য ফ্লোরাল বেণী অথবা কাড়লি চুল ছেড়ে দিয়ে রাখতে পারেন। এর সাথে মাথায় রেখে খুব ন্যাচারাল টাইপের লুক ক্রিয়েট করা হয়। বরের জন্য কনের সাথে মিল রেখে লাইট পিচ কালার অথবা লাইট লেমন কালারের কটি সেটগুলো বেছে নিতে পারেন। মূলত কনের সাথে মিল রেখেই বরের আউটলুক ক্রিয়েট করতে হবে। কনের সাথে বেমানান অথবা জমকালো কোনো কিছু বরের জন্য মানানসই হবে না।
Advertisement
জাঁকজমকপূর্ণতায় অন্যরকম আয়োজন: ইনচেনটেড ইভেন্টসের সিইও সাওসান খান মঈন জানান করোনার পরিস্থিতির কারণে থমকে যাওয়ার পর ঘরোয়া পরিবেশেই সবচেয়ে বেশি আকদ ও গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিক আয়োজন করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সবাই। যদিও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঘটা করে আয়োজন চললেও এখন আবার করোনার দ্বিতীয় ধাপের কারণে তা আগের মতো ছোট পরিসরেই হচ্ছে।
এছাড়া আকদ, হলুদ বা বিয়ের আয়োজনে প্রতিটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্ব্বোচ্চ সতর্কতাও নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইনচেনটেড ইভেন্টের প্রধান নির্বাহী এ কর্মকর্তা বলেছেন তাদের যেকোন আয়োজনেই নিজস্ব জনবল দিয়ে কনভেনশন সেন্টারের প্রতিটি দিকেই যথেষ্ট পরিমাণ হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, খাবারের টেবিলে প্লেট, গ্লাসসহ আনুষাঙ্গিক সকল জিনিস অত্যাধুনিক প্ল্যাস্টিক পেপার দিয়ে রেপিং করা হচ্ছে।
ফ্রেমবন্দি করুন আনন্দঘন পরিবেশের দৃশ্য: সব আয়োজন তো হলোই। সেই আয়োজনকে সারাজীবন স্মৃতির ক্যানভাসে তুলে রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ছবি। তেমনই বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রেমিনিস্সেন্স ফটোগ্রাফির কর্ণধার ও চিফ ফটোগ্রাফার আতা মোহাম্মদ আদনানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিয়ের ফটোগ্রাফির ব্যাপারে।
তিনি বললেন ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ব্যাসিক্যালি দুই ধরনের হয়, একটি ন্যাচারাল অন্যটি ক্যান্ডিড। আমারা সব ক্লাইন্টে ছবি ফ্রেমবন্দি করার সময় স্বতঃস্ফুর্ত ভঙ্গিমায় রাখার চেষ্টা করি। আধুনিকতার এ যুগে এখন সবাই ন্যাচারাল ও ক্যান্ডিড ছবিই পছন্দ করে। তিনি দিয়েছেন স্বল্প থেকে সর্বোচ্চ বাজেটে ফটোগ্রাফির প্ল্যাটফর্মের ধারণা।
Advertisement
সর্বনিম্ন: বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে অসংখ্য টিম রয়েছে। তাদের কাজের একই ধরন।
মিডিয়াম: ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ভালোমানের ফটোগ্রাফি করছে Shutterbug, Reels এবং Stories.
হাই: ৪০ হাজার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকায় সর্ব উন্নতমানে ছবি তুলছে Reminiscence Photography, Snapshot, K Nasif Photography.
প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও দিকনির্দেশনা
১. অতিথিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক স্প্রে ও শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে হবে।২. খাবার পরিবেশনেও নিশ্চিত করতে হবে সর্বোচ্চ সুরক্ষা। পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে খাবার রান্না এবং ক্যাটারিংয়ের দায়িত্ব এমন কাউকে দিতে হবে যিনি এ বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।৩. অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিদের সংখ্যা যত কম রাখা যায় ততোই ভালো। পরিবারের সদস্যরা এবং নিক আত্মীয়দের কেবল নিমন্ত্রণের তালিকায় রাখুন। খোলামেলা জায়গায় বিয়ের আয়োজন করার চেষ্টা করবেন। যাতে করে নিজেদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায়।
এমএমএফ/এমকেএইচ