ক্যাম্পাস

সবুজ ক্যাম্পাসে রক্তের দাগ লাগেনি

সেশনজট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়টি পার করেছে ২৫টি বছর। আর এ ২৫ বছরে ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংঘর্ষ বা হানাহানি হয়নি। এমনকি সবুজ এই ক্যাম্পাসে রক্তের দাগ লাগেনি বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েকুজ্জামান।জানা গেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘ দিনের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাশ শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। পরবর্তীতে একই বছর ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এবং ভবিষ্যতের চাহিদার নিরিখে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা, ব্যবসায় প্রশাসন, এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিষয় দেশে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কোর্স খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু করা হয়। এছাড়া স্থাপত্য শিক্ষা কোর্স ঢাকার বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু করা হয়।  বর্তমানে এখানে ৫টি স্কুল (অনুষদ) ও ১টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ২৬টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি. প্রদান করা হয়। স্কুলগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন। জীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে- ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রোটেকনোলজি, এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স, ফার্মেসি ও সয়েল সায়েন্স ডিসিপ্লিন। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে- ব্যবসায় প্রশাসন ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন। কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন। সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে- অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ইনস্টিটিউটের নাম চারুকলা ইনস্টিটিউট। এ ইনস্টিটিউটের আওতায় প্রিন্ট মেকিং, ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ও ভাস্কর্য ডিসিপ্লিন চালু হয়েছে। এছাড়া সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দ্য সুন্দরবন (সিআইএসএস), রিসার্স সেল, মডার্ন ল্যাংগুয়েজ সেন্টার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মান বিশ্বমানে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (সিইটিএল) এবং ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজে তথ্য প্রযুক্তির সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় ইনস্টিটিউট (আইইআর) এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৩৯৮ জন। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ছয় হাজারের বেশি। এর মধ্যে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ১২ জন। এছাড়া কর্মকর্তা ২৩৯ জন এবং কর্মচারী রয়েছে দুই শতাধিক। এচঅড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিশেষ করে নবীন শিক্ষকবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি সংস্থার গবেষণার সহায়তাও বেড়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধারাবাহিক শিক্ষা সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্র সংঘর্ষ, হানাহানি হয়নি। সবুজ ক্যাম্পাসে রক্তের দাগ লাগেনি। সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখার ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পরিগ্রহ করছে।  উপাচার্য আরও বলেন, দেশের তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার বিকাশে স্থানীয় সম্পদ আহরণ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন জনসম্পদ সৃষ্টি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নেয়া এবং সম্ভাবনার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।আলমগীর হান্নান/এসএস/আরএস/আরআইপি

Advertisement