মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। কোনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) একটা শয্যা মিলছে না। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম খরচে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেডে রোগীর ভিড় বেশি। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা না থাকায় রোগীর জীবন বাঁচাতে নিরূপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর জন্য একটা আইসিইউ বেড যেন ‘সোনার হরিণ’। রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইসিইউ বেড ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে।
ছোটাছুটি করে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা গেলেও গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। হাসপাতালভেদে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। যেকোনো মুহূর্তে লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে— এই মর্মে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড সংখ্যা ৩২৬টি। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ২২৬টি বেড, অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ বেডে রোগী ভর্তি আছে।
Advertisement
সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬টি, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট ২) ও বার্ন ইউনিটে ২৪টি, ৫৯০ শয্যা মুগদা হাসপাতালের ১০টিসহ মোট আইসিইউ বেড সংখ্যা ৬০টি। এগুলোর মধ্যে ঢামেক হাসপাতালের একটি ছাড়া ৫৯টি আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা গেলেও গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা
এছাড়া রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টির মধ্যে ১১টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৬টির মধ্যে ১৪টি, মহাখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১৬টির মধ্যে ১০টি, ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৯টি, ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ছয়টির মধ্যে তিনটি, আজগর আলী হাসপাতালের ৩১টির মধ্যে ২৩টি, স্কয়ার হাসপাতালে ২৫টির মধ্যে ১৭টি, ইবনে সিনা হাসপাতালের ছয়টির মধ্যে ছয়টি, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২২টির মধ্যে ১৪টি, এভারকেয়ার হাসপাতালে ২০টির মধ্যে ১৮টি, ইমপালস হাসপাতালে ৫৬টির মধ্যে ১৩টি, এএমজেড হাসপাতালে ২১টির মধ্যে ১৭টি এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১২টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
এদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ৩৯টি শয্যার মধ্যে ১৯টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১০টির মধ্যে চারটি, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৯টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়টির মধ্যে ছয়টি আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।
Advertisement
রাজধানীসহ সারাদেশে মোট সাধারণ বেডের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৩৮টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ৩ হাজার চারজন। অপরদিকে সারাদেশে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৫৭৪টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ৩২৮ জন।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ হাজার ৬৭৫ জন। মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস