রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি সাত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সিট ভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মজীবী নারীরা। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে রাজধানীর নীলক্ষেত কর্মজীবী হোস্টেলের নারীরা নীলক্ষেত-কাঁটাবন সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই শতাধিক নারী বর্ডার রাস্তায় নেমে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।একাধিক বর্ডারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর হোস্টেলের সিটভাড়া দ্বিগুণ করে নোটিশ দেয় হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ৩০ ও ৩১ অক্টোবর হোস্টেল বন্ধ থাকায় নোটিশটি কারো নজরে আসেনি। পরে নোটিশ দেখে কর্মজীবী নারীরা ভাড়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে হোস্টেল সুপার সাবেকুন নাহার জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সবাইকে বর্ধিত ভাড়াই পরিশোধ করতে হবে। এসময় তিনি কর্মজীবী নারীদের মহিলা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহীন আহমেদ চৌধুরীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।পরামর্শ অনুযায়ী তারা মহিলা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহীন আহমেদ চৌধুরীর কাছে দেখা করতে চাইলে পাঁচজনকে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে গেলে তাদের পাঁচজন থেকে মাত্র তিনজনকে প্রথমে ঢুকতে দেয়া হয়। পরে বাকিদের দেখা করলে তিনি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন।এরপর কর্মজীবী নারীরা বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিমন্ত্রী ১০ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানান। কিন্তু ১০ নভেম্বর চলে গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় মঙ্গলবার রাতে কর্মজীবী নারীরা হোস্টেল ছেড়ে বের হয়ে আসেন এবং রাস্তা অবরোধ করে- ‘বর্ধিত ভাড়া বাতিল করো’ ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।কুলসুম আকতার নামে এক আন্দোলনকারী জাগো নিউজকে জানান, ‘কোনো ধরনের পূর্ব নির্ধারিত নোটিশ ছাড়াই হোস্টেলের ভাড়া ও ফি দ্বিগুণ করার প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমরা হোস্টেল সুপারের মাধ্যমে এর আগে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি কিন্তু তিনি আমাদের কোনো যুক্তি শুনতে রাজি নন। তিনি বলেন, এটি সরকারের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ এসময় তিনি জানান, হোস্টেল কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে সিটভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহার কিংবা আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’আন্দোলনকারীরা জানান, আগে সিঙ্গেল সিটের ভাড়া ছিল ১৬০০ টাকা, এখন সেটা করা হয়েছে ৩০০০ টাকা। ডাবল সিটের ভাড়া ছিল ১১০০ টাকা, এখন ২০০০ টাকা। তিন সিটের ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা করা হয়। চার সিটের ভাড়া ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা। ভর্তি ফি ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। অতিথি ফি ১০০ থেকে ২০০।ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এহসান জানান, কর্তৃপক্ষ তাদের খবর দেয়নি। নিউমার্কেট থানা কাছে এবং রাস্তা অবরোধের ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এসব পরিস্থিতির কথা ভেবেই ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এসআই আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এদিকে রাত ১১টার দিকে নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সুপার সাবেকুন নাহার হোস্টেলের বাইরে রাস্তায় এসে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, সিট ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে এ বিষয়ে জানানো হবে। রাস্তা থেকে সরে যান।এরপর তিনি হোস্টেলে প্রবেশ করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা হোস্টেলের গেইট বন্ধ করে দেন। এবং তাকে এর সঠিক সমাধান ছাড়া হোস্টেলে ফিরতে দেবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। এক পর্যায়ে হোস্টেল সুপার রাস্তায় মেয়েদের আন্দোলনের সঙ্গে রাস্তায় একাত্বতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমি তাদের মায়ের মতো, যেহেতু আমার মেয়েরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। সেহেতু আমাকেও তাদের সঙ্গে রাস্তায় থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।এদিকে, আন্দোলকানীরা জানিয়েছেন, তাদের হোস্টেলের ক্যান্টিনে মাসিক খাবারের কুপন ১০ তারিখের মধ্যে না কিনলে এই মাসে কুপন তারা বিক্রি করবেন না।এমইচ/বিএ
Advertisement