বিনোদন

৪২ বছরে পা রাখলেন ‘বস’ জিৎ

পর্দায় সুদর্শন, কখনো অপ্রতিরোধ্য প্রেমিক, কখনো প্রতিশোধের নেশায় ভয়ঙ্কর কোনো যুবক, কখনো বা তিনি দর্শককে মাতিয়ে রাখেন দারুণ সব কমেডিতে। তিনি সুপারস্টার, কলকাতার সিনেমার ‘বস’ জিৎ। আজ ৩০ নভেম্বর দুই বাংলার তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতার জন্মদিন। এবার তিনি ৪২ বছরে পা রাখলেন।

Advertisement

জন্মদিনে ভক্ত-অনুরাগীসহ ইন্ডাস্ট্রির সহশিল্পীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তিনি।

কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে জিতের অভিষেক ঘটে ২০০২ সালে ‘সাথী’ সিনেমা দিয়ে। প্রথম সিনেমাই সুপার ডুপার হিট। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অসংখ্য ভক্তের ‘হার্টথ্রব’ এখন জিৎ। একজন সফল অভিনেতার পাশাপাশি আরও অনেক গুণ রয়েছে জিতের। ভারোবাসেন নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে।

সিনেমায় নাম জিৎ হলেও জন্মসূত্রে তিনি জিতেন্দ্র মদনানি। ১৯৭৮ সালের আজকের দিনে সিন্ধি পরিবারে জন্ম জিতের। সেন্ট জোসেফ অ্যান্ড মারি স্কুলে, নিউ আলিপুর ও পরে ন্যাশনাল হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃক পরিচালিত ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজ হতে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। এরপর তিনি তার পরিবারের ব্যবসায় দেখাশোনার কাজে যোগ দেন।

Advertisement

তবে সৃজনশীল কাজের প্রতি তার বরাবরই উৎসাহ ছিল। মাঝেমধ্যে তিনি বিখ্যাত অভিনেতাদের অভিনয় অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন। সেই আগ্রহ থেকেই ১৯৯৩ সালে মডেল হিসাবে গ্ল্যামার দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ।

সিনেমার দুনিয়ায় পা রাখার আগে ‘বিষবৃক্ষ’, ‘জননী’, ‘ডটরস অফ দ্য সেনচুরি’র মতো বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তিনি। বাংলা সিনেমার এই সুপারস্টারের বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল তামিল ‘চান্দু’ সিনেমা দিয়ে। প্রথম ছবিটি বক্স অফিসে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল।

২০০২ সালে হরনাথ চক্রবর্তী তার ভাগ্যটা বদলে দেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে তিনি কলকাতায় আসেন এবং পরিচালক হারানাথ চক্রবর্তীর কাছ থেকে দেখা করার প্রস্তাব পান এন.টি.ওয়ান. স্টুডিওতে। তার কাছ থেকে তিনি ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাথী’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান এবং এই ছবির দৃশ্যায়ন শুরু হয় ১৫ জানুয়ারি, ২০০২ থেকে। এই ছবি জিৎকে বাংলা ছবির জগতে এক বিশেষ স্থান করে দেয়। বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছিল জিৎ এবং প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদীর জুটি।

যদিও তিনি রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন, ক্রমশ তিনি একজন অ্যাকশন হিরো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন ডায়নামিক একজন অভিনেতা।

Advertisement

২০০৫ সালে থামস আপের এক বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে তিনি আরো সুপরিচিত হন। তার অভিনীত ‘১০০% লাভ’ ছবিতে প্রযোজনার মাধ্যমে ২০১২ সালে তিনি একজন সফল প্রযোজক হিসেবে সমাদৃত হন। তার পরের ছবি ‘আওয়ারা’ আয়ের দিক থেকে আগের অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড করে। এর মধ্যে শ্রাবন্তীর বিপরীতে অভিনীত ‘দিওয়ানা’ এবং শুভশ্রী গাঙ্গুলীর বিপরীতে অভিনীত ‘বস’ ছবিও বেশ উল্লেখযোগ্য।

‘বস’ ছবিটি ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মহেশ বাবুর পরিচালিত ব্লকবাস্টার তেলেগু ছবি ‘বিজন্যাসম্যান’ ছবির পুনঃনির্মাণ। এই ছবিটি বাবা যাদবের পরিচালনা ও রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় মুক্তি পায়।

টলিউডের সর্বোচ্চ হিট ছবির নায়ক বলা হয় জিৎকে। তার ব্যবসা সফল ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাথী, জোশ, শত্রু, দুই পৃথিবী, ফাইটার, ১০০% লাভ, আওয়ারা, বস, বস টু, অভিমান, বাদশা ইত্যাদি।

সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে তারই প্রযোজিত ‘নিউজিল্যান্ড’ নামের সিনেমায়। এখানে তিনি শুধুমাত্র একটি গানে অংশ নিয়েছেন আবির চ্যাটার্জি ও রুক্ষ্মীনীর সঙ্গে। তবে ‘অসুর’ দিয়ে ভিন্ন মাত্রার একটি চরিত্রে অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি গেল বছর।

কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও জিতের জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। সেই ‘সাথী’ ছবি দিয়েই তিনি দুই বাংলার দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছেন। যৌথ প্রযোজনার কিছু ছবিতেও দেখা গেছে তাকে।

ব্যক্তিজীবনে ২০১১ সালে বিয়ে করেন এই নায়ক। লখনউয়ের মেয়ে মোহনা রতলানির সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে এক কন্যাও রয়েছে তার। নাম নভন্যা।

শপিং করতে দারুণ ভালোবাসেন জিৎ। শপিংয়ের জন্য জিতের পছন্দের জায়গা ইতালি। শুটিং বা ঘুরতে যে কাজেই তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেন, সেখানে পৌঁছে সবার আগে মেয়ে নভন্যার জন্য কিছু না কিছু জিনিস কিনে ফেলেন।

ইন্ডাস্ট্রিতে জিতের বন্ধু খুব একটা নেই। টলিউড পার্টি থেকে দূরেই থাকেন সবসময়। জিতের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হল তার ডায়েরি। ডায়েরি লিখতে ভীষণ ভালোবাসেন টলিউডের বস। দুঃখ, রাগ, ক্ষোভ থেকে আনন্দ বা খুশির মুহুর্ত সব কথাই ডায়েরিতে লেখেন জিৎ।

এলএ/এমএস