দেশের সংগীতাঙ্গনের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী মনির খান। কয়েক দশক ধরে শ্রোতাদের গান শুনিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কোটি শ্রোতার ভালোবাসার পাশাপাশি জয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি। এখনও সংগীত সাধনায় নিমগ্ন।
Advertisement
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও হারিয়ে যাননি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন অনলাইনে সরব থেকেও। নিয়মিতই তার ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যায় নতুন গান। সেসব গান প্রচারে না থাকলেও তার শ্রোতা-ভক্তরা ঠিকই লুফে নিচ্ছেন ভালোবেসে।
সবার প্রিয় গায়ক মনির খানের গানের ভুবনে পথচলার ২৫ বছর পূর্ণ হলো। ক্যারিয়ারের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি।
সেখানে তার প্রথম অ্যালবাম ‘তোমার কোনো দোষ নেই’র সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মান জানানো হয়েছে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল মিল্টন খন্দকারকে। অতিথি করা হয়েছিল মিলন ভট্টাচার্য ও মনির খানের প্রথম অ্যালবামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
মনির খানের এই অনুষ্ঠান ছিল মূলত কৃতজ্ঞতা স্বীকারের। আজ থেকে ২৫ বছর আগে মনির খান কীভাবে শিল্পী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন সেই গল্পও জানিয়েছেন তিনি। মনির খান বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে পথচলাটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিল না শুরুর দিনগুলো। নতুন বলে নামি দামি কোনো মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ পেতাম না। মনে কষ্ট নিয়ে দিনের পর দিন ঘুরেছি একটা সুযোগের আশায়। নতুন শিল্পীর বুকের ভেতরে কত যন্ত্রণা, কত ভোগান্তি সেটা আমি বুঝি।’
তার শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে সব মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অহঙ্কার নেই আজ এ জায়গায় এসে। আমি অতীতও ভুলে যাইনি। গ্রাম থেকে টাকা নিয়ে এসেছিলাম গানের ক্যাসেট করবো বলে। মিল্টন খন্দকার ভাই সেই টাকা ফেরত দিয়ে আসতে বলেছিলেন। আমি ফেরত দিয়ে এসেছিলাম।
একজন মিল্টন খন্দকার আমার জীবনে যে কি তা বলে বোঝাতে পারবো না। তার সঙ্গে আমার ৩০ বছরের সম্পর্ক। এই সময়ে আমাদের সম্পর্কের কোনো ঘাটতি হয়নি। এই ৩০ বছরে অনেক সংসারে ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু মিল্টন খন্দকারের সঙ্গে মনির খানের ডিভোর্স হয়নি।
Advertisement
এই ৩০ বছরে আমার জীবনে আগোছালো, অপূর্ণতা যা কিছু ছিল সব কিছু তিলে তিলে শুধরে নেয়ার দায়িত্ব মিল্টন ভাই নিয়েছেন। যে মানুষটি আমার জীবনের এতো কিছুর সঙ্গে জড়িত, আমার জন্য এতো কিছু করেছে তাকে আমি সম্মান করবো না, তাকে সংগীতের পিতা বলবো না এমন মানুষ আমি নই।’
মনির খান বক্তব্যে আরও বলেন, ‘তখন একটা মেসে থাকতাম, হেঁটে হেঁটে সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের কলাবাগানের বাসায় যেতাম। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে। সেসব দিন আমি ভুলিনি। ভোলার নয় কোনো দিন।
আজ এই অনুষ্ঠানে আমি তেমন কোনো বিশেষ অতিথিকে ডাকিনি। কারণ আজকের অনুষ্ঠান আমার সাধারণ ভক্তদের নিয়ে। যারা সংগীতশিল্পী হয়ে উঠতে চায়, মঞ্চে উঠতে চায় আজ তাদের ডেকেছি। তারা মঞ্চে উঠে গাইবে। আজ কোনো পেশাদার শিল্পী গাইবে না। কারণ একজন নতুন শিল্পীর বেদনা আমি বুঝি। আমার বন্ধু মানুষ রবি চৌধুরী এই অনুষ্ঠানের ঘটনা জানতে পেরে আমাকে ফোন দিয়েছিল। বলল বন্ধু তুমি আমাকে দাওয়াত করলে না। আমি বললাম এটা তো সাধারণের অনুষ্ঠান আমি তো শিল্পী হিসেবে কাউকে বলিনি।’
দাওয়াত না পেয়েও প্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার মর্মটা তিনি বুঝতে পারলেন, সাড়া দিলেন অনুষ্ঠানে। রবিকে দেখে আবেগমাখা স্পর্শে বুকে টেনে নিলেন মনির খান। এ দৃশ্য মন ভালো করে দেয়। এ দৃশ্য সংগীতাঙ্গনের অনেকেই মনে রাখবেন অনেক দিন।
এলএ/এমকেএইচ