বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এখনো আমরা আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার দিতে পারি নি, তাদের অধিকার প্রদানে ব্যর্থ হয়েছি ।মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। মেনন বলেন, ‘সংবিধানে আমরা এখনো আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার দিতে পারিনি। সংবিধানের খসড়ার মধ্যে অবশ্যই এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু তখন একজন সদস্য দাঁড়িয়ে প্রস্তাব করল যে, বাংলাদেশে যারা বাস করবে তাদেরকে বাঙালি রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকতে হবে। সেই সময়ে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করে নিলেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এভাবে গৃহীত হলো এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য তা বলার অবকাশ রাখে না।’ স্বরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, লেখক আবুল মকসুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, আইন ও শালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাসগুপ্ত, লারমা’র মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বাক শ্রী পঙ্কজ ভট্রাচার্য প্রমুখ।পার্বত্য চট্রগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কোনো প্রশাসনিক বা সামরিক সমাধান নাই। সেই সমাধানের পথে পার্বত্য শান্তিচুক্তি ছিল বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং সংবিধানে তার স্বীকৃতি এ দুটি আমদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে যে বাঙালীকরণ ও ধর্মীয়করণের প্রক্রিয়া চলছে তার বিরুদ্ধেও আমাদের সকলকে এক হতে হবে।’ ব্লগার হত্যা নিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ব্লগারদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা প্রচার করে তাদের হত্যা করা হয়, আমি তা বিশ্বাস করি না। আমি ধর্মকে বাদ দেওয়ার কথা বলছি না। বলার প্রশ্নও নাই। অভিজিতের বইয়ে অবিশ্বাসের কথা আছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কোনো কথা নেই। অথচ তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দীপন কারো সাতে-পাঁচে থাকত না। কেবল অভিজিতের বই প্রকাশের জন্য তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।’তিনি বলেন, ‘আমাদের একটু হুঁশিয়ার হতে হবে। তা হলো আমাদের দেশে কিছু কিছু অ্যাম্বাসি, রাষ্ট্রদূত একটি বিষয় প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছেন যে, বাংলাদেশে আইএস আছে। এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আইএসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা কাজ করতে প্রস্তুত।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব। মাফ করবেন রাষ্ট্রদূত! আমরা জানি, সিরিয়ায় আইএস বিরোধী লড়াইয়ের নামে সিরিয়াকে কিভাবে ধ্বংস করেছেন আপনারা। ইরাকে আইএসের জন্ম দিয়েছেন তার ইতিহাস সবার জানা।’তিনি বলেন, ‘যারা আমার দেশকে একটি ধর্মভিত্তিক দেশে পরিণত করতে চায়। অথবা সেই চিত্র গায়ে দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে সেই সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার হতে হবে।’ আবুল মকসুদ বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়িত হলো না। এজন্য তিনি একটি কমিটি গঠনের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লারমা’র নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বৃত্তি প্রতিষ্ঠা করারও দাবি জানান তিনি। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আদিবাসীদের আত্মত্যাগের কথাও আছে। যুবকদের লারমা’র জীবনী পাঠ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, লারমা কেমন ছিলেন তা যুবকদের জানা দরকার। তাকে ১৯৮৩ সালের এইদিনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য লড়াই করে জীবন দিতে হয়েছে। সুলতানা কামাল বলেন, আজকে আদিবাসীদের বলা হচ্ছে তোমরা আদিবাসী নয়, বাঙালি। এ ছোট কথার মধ্য দিয়ে তার অস্তিত্বকে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। তার নাগরিকত্বও হনন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জোর গলায় বলতে চাই, এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না , মেনে নেব না। এমএইচ/এসকেডি/আরআইপি
Advertisement