মহিউদ্দিন অপু
Advertisement
'মাছ রপ্তানীতে নানা প্রকার জটিলতা আছে, প্রসােসিং করতে হয়, কিন্তু মুক্তার ক্ষেত্রে সেরকম কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। আগ্রহী ব্যক্তি সহজেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তা চাষ করে লাভবান হতে পারেন। পুকুর বা জলাশয়ে এক সঙ্গে মুক্তা এবং মাছ চাষ করে যেকোনো পরিবার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।'- কথাগুলো বলছিলেন ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে সফলতা পাওয়া বরগুনার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তার মুক্তা চাষের সফলতার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে উপকূল জুড়ে।
বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া গ্রামে ব্রাইট এ্যাগ্রো নামের একটি কৃষি খামার স্থাপন করেন মো. নুরুল ইসলাম। এতে সার্বিক সহযোগীতা করেন তার ছোট ভাই মো. কামরুল ইসলাম। ২০১৯ সালে ব্রাইট এ্যাগ্রো ফার্মে মাছের পাশাপাশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেয় তারা।
গড়ে তোলেন একটি প্রদর্শনী খামার। মুক্তা চাষের এই প্রকল্প দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন খামারে। আগ্রহীদের ব্রাইট এ্যাগ্রোর পক্ষ থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
মুক্তা চাষ সম্পর্কে জানা যায়, মুক্তা চাষের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিমাণে মান সম্পন্ন ঝিনুক প্রাকৃতিক জলাধার থেকে সংগ্রহ করে তাতে পূর্বে প্রস্তুতকৃত ইমেজ, মান্ডেল টিস্যুর পাশে স্থাপন করে প্রথম ৪৫ দিনের জন্য আটকানাে নেটে রাখতে হয়।
কেননা সুযােগ পেলে ঝিনুক ফরেন বড়ি শরীর থেকে বের করে দিবার চেষ্টা করে। ৪৫ দিনের মধ্যে স্থাপিত ইমেজটি দেহের খােলসের সাথে আটকে যাওয়ায় তখন আর ফেলতে পারে না। ৪৫ দিন পরে নেটের ভেতরে মাটির প্রশস্থ বাসন জাতীয় পাত্রের উপর আটকিয়ে রাখলে এবং ঝিনুকের খাদ্য হিসেবে প্লাংটন উৎপাদনের জন্য গােবর প্রয়ােগ করলে ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মুক্তা আহরণের উপযুক্ত হয়।
গােলাকার মুক্তা উৎপাদনের জন্য অন্য ঝিনুকের ম্যানেডল টিসু নিয়ে ছােট ছােট টুকরাে করে মুক্তা উৎপাদনের বিশেষ থলিতে স্থাপন করলে ৩ বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ মুক্তা উৎপাদিত হয়। মুক্তা জুয়েলারি, ঔষধ শিল্পে, কসমেটিকসে, পেইন্টস ফরমুলেশনে ব্যবহৃত হয়। মুক্তা চাষের উদ্যোক্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে মুক্তা চাষ। প্রতিটি ঝিনুক থেকে উৎপাদিত হয় প্রায় ৬টি মুক্তা। বর্তমানে ব্রাইট এ্যাগ্রোতে ৩ হাজারের বেশি মুক্তা উৎপাদিত হয়েছে। গ্রীসে অবস্থানরত বাঙালিরা মুক্তা সংগ্রহের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন।
নুরুল ইসলামের মুক্তা চাষ দেখে এলাকার অনেকেই মুক্তা চাষে আগ্রহী। বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ও আবদুল আলীম বলেন, আমাদের দেশের হাওড় ও বিলে স্বল্প পরিমাণ মুক্তা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। মুক্তা চাষের প্রসার ঘটলে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
Advertisement
গ্রামীণ দারিদ্র বিমােচনে মুক্তা চাষ একটি বিরাট সাফল্য বয়ে আনতে পারে। আমরা নিজেরাও মুক্তা চাষ করতে আগ্রহী। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ সম্ভব।
বরগুনার জেলা প্রাশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ নুরুল ইসলামের মুক্তা চাষ প্রকল্প পরিদর্শন করে বলেন, উপকূলীয় এলাকায় তার মতো উদ্যোক্তার প্রয়োজন। বেকার যুবকরা একটু উদ্যোগী হলে মুক্তা চাষ প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
এমএমএফ/এমএস