দেশজুড়ে

নির্যাতনের বিচার পাচ্ছেন না চেয়ারম্যানের পুত্রবধূ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আসামিরা। তবে পুলিশ বলছে আসামি ধরতে তাদের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ১০ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত ১৯ নভেম্বর মুক্তাগাছা থানায় স্বামী ইসমত দোহা মিঠুকে প্রধান আসামি, তার বড় ভাই মেজবাহ উদ্দিন, শ্বশুর মাহবুবুর আলম ফকির ও শাশুড়ি শরিফা আক্তার লিলিকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন মোছা. হালিমা খাতুন।

Advertisement

নির্যাতিতা গৃহবধূ হালিমা খাতুন জানান, ২০১৭ সালের শেষের দিকে খেরুয়াজানী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম ফকিরের ছেলে ইসমাত দোহা মিঠুর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। তাদের একটি ৯ মাস বয়সী ছেলে রয়েছে।

বিয়ের সময় তার বাবা সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেন। কিন্তু ছেলে আব্দুর রহিমের জন্মের কিছুদিন পর থেকে স্বামী ইসমত দোহা মিঠু অন্যান্য আসামিদের পরামর্শে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর টাকার জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

Advertisement

১৬ সেপ্টেম্বর স্বামী ইসমত দোহা মিঠু ও অন্যান্য আসামিরা তার বাবার বাড়িতে গিয়ে টাকার জন্য তাকে আবারও মারপিঠ করেন। পরে লোকজন এসে তাকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও তা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ আসামিদের ধরছেও না।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইসমত দোহা মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে থাকে পাওয়া যায়নি, মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে।

তার বাবা মাহবুবুর রহমান ফকির বলেন, বিয়ের পর থেকেই তার পুত্রবধূ তাদের বাড়িতে থাকে না। বাবার বাড়িতে থাকার কারণে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তবে তারা তাকে নির্যাতন কিংবা তার কাছে যৌতুক দাবি করেননি বলেও জানান।

এদিকে মাহবুবুর রহমান ফকিরের ছোট ভাই চিকিৎসক মহসীন উদ্দিন বলেন, গৃহবধূ নির্যাতনের বিষয়টি সত্য। এর সঠিক বিচার হওয়া উচিত। তারা টাকার জন্য সবই করতে পারে। আমাকেও আমার বাবার সম্পত্তির অংশ দেয়নি। মাহবুবুর রহমান ফকির তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।

Advertisement

আরেক ভাই অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন বলেন, মাহবুবুর রহমান ফকির ওরফে আলম চেয়ারম্যান আদর্শহীন মানুষ। তিনি সবসময় সরকার দলের লোক হয়ে এলাকায় প্রভাব কাটান। উপজেলা শহরে তিনি ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। বিয়ের পর থেকেই মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছে অনেকবার। এলাকায় কম-বেশি সকলেই তার নির্যাতনের স্বীকার। এসব কুকর্মের বিচার হওয়া উচিত।

মুক্তাগাছা থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, নির্যাতিতা গৃহবধূ হালিমা খাতুন উপজেলার বাহেঙ্গ গ্রামের আব্দুল হালিম সরকারের মেয়ে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামি ধরার জন্য পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মাহবুবুর রহমান ফকির ওরফে আলম চেয়ারম্যান মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে গুলি করেন এবং উপজেলার গড়বাজাইল বাজারে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় সেসময় মুক্তাগাছা থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়। মামলা দুটিতে তাকে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি করা হয়। মামলা দুটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এফএ/এমএস