ধর্ম

মৃত্যুর পর অমুসলিমের জন্য দোয়া করা যাবে কি?

আল্লাহ, রাসুল, কুরআন তথা ইসলামে বিশ্বাস করে না, এমন ব্যক্তির জন্য হেদায়েত লাভে দোয়া করা যাবে। কিন্তু ঈমান আনেনি কিংবা ইসলামে বিশ্বাসী ছিল না; মুসলিম নয়, এমন ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যুর পর দোয়া করা যাবে কি? আলেম কিংবা ইমামদের দোয়া করতে বলা যাবে কি? কোনো মুসলমান তাদের ব্যাপারে দোয়া করতে বললে তার ব্যাপারে শরিয়তের বিধানই বা কী?

Advertisement

‘না’, যারা মুসলিম নয়; কখনো ইসলামে বিশ্বাস করেনি; তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য দোয়া করা যাবে না। দোয়া করার অনুরোধও করা যাবে না। তা মুমিন মুসলমানের জন্য সুস্পষ্ট হারাম। কেননা ঈমানহীন ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পর দোয়া করা না করা সমান কথা। কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট।

কখনো ইসলামে বিশ্বাস করেনি তথা আল্লাহ, রাসুল, আসমানি কিতাব, পরকালে বিশ্বাস না করা ব্যক্তিদের জন্য তাদের মৃত্যুর পর ক্ষমা প্রার্থনা করা বা না করা সমান কথা। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না বলে কুরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে উল্লেখ করেন-- ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুত আল্লাহ নাফরমানদের পথ দেখান না।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৮০)

- ‘নবি ও মুমিনদের উচিত নয়; মুশরেকদের জন্য মাগফেরাত (ক্ষমা) কামনা করে, যদিও তারা আত্মীয় হোক; একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।’ (সুরা তাওবাহ : আাত ১১৩)

Advertisement

কুরআনুল কারিমের আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যদি কেউ ঈমানহীন হওয়ার কারণে সুস্পষ্ট জাহান্নামী হয়, যদি সে আত্মীয়ও হয়; তথাপিও তার জন্য মৃত্যুর পর দোয়া করা যাবে না। কাউকে দোয়া করতে বলাও যাবে না। কেননা তা সুস্পষ্ট হারাম। আর যারা হারাম কাজ করবে বা হারাম কাজে উৎসাহিত করবে, তারা হবে সুস্পষ্ট গোনাহগার।

অমুসলিম বা ঈমানহীন ব্যক্তির জন্য দোয়া প্রসঙ্গে হজরত নুহ আলাইহিস সালামের সে ঘটনাটি উল্লেখ করা যেতে পারে। যখন তাঁর ছেলে পানি ডুবে মরতে ছিল। সে বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আ তাহলো-- আর নূহ তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন- হে পরওয়ারদেগার! আমার ছেলে তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৪৫) - ‘আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৪৬)

তখন হজরত নুহ আলাইহিস সালাম ঈমানহীন সন্তানের জন্য দোয়া করার আবেদন থেকে ফিরে আল্লাহর কাছে এ মর্মে প্রার্থনা করেন-رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَউচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি আউজুবিকা আন আসআলুকা মা লাইসা লি বিহি ইলমুন ওয়া ইল্লা তাগফিরলি ওয়া তারহামনি আকুমমিনাল খাসিরিন।’অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার যা জানা নেই এমন কোনো দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৪৭)

সুতরাং যদি কোনো মুমিন মুসলমান ভুলবশত কিংবা কোনো কারণে বা চাপে পড়ে ঈমানহীন অমুসলিম ব্যক্তির জন্য দোয়া করে তবে তার উচিত, আল্লাহ কাছে তাওবা করা। হজরত নুহ আলাইহিস সালামের পড়া দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

Advertisement

মনে রাখতে হবেমুসলিম উম্মাহর সব আলেম-ওলামা এ বিষয়ে একমত- যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য দোয়া করা যাবে। এছাড়া মুসলমান নয়; ঈমানহীন কোনো ব্যক্তির জন্য কোনোভাবেই দোয়া করা যাবে না। অন্য কাউকে দোয়া করতে আদেশ, অনুরোধ করাও যাবে না।

যদি কেউ কোনো অমুসলিমের জন্য দোয়া করে তবে সে নিজেকে হারাম কাজে নিয়োজিত করার কারণে অপরাধী হবে। তবে না জেনে কেউ এমনটি করলে উপরে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে তাওবাহ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস