দেশজুড়ে

রংপুরে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় আ.লীগ

রংপুর জেলায় তিনটি পৌরসভা থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পীরগঞ্জ এবং মেয়াদ পূর্তি না হওয়ায় কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভার নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে শুধু বদরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যেই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে বদরগঞ্জ পৌরসভায়। নির্বাচনকে ঘিরে গত ঈদ ও দূর্গাপুজায় পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। টানানো হয়েছে বিল বোর্ড। বর্তমানে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন, সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা হলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছুঁটে যাচ্ছেন তাদের কাছে। এছাড়া প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থন বাড়াতে এখন থেকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের এমন তৎপরতায় ভেটাররাও করছেন চুলচেড়া বিশ্লেষণ করছেন। এ পৌরসভায় সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন, বর্তমান মেয়র উত্তম কুমার সাহা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, বদরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী পলিন ও বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আজিজুল হক। ১৯৯৯ সালে বদরগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর ২০০১ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনেও বর্তমান মেয়র উত্তম কুমার সাহা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চান। তাই দলীয় সমর্থন পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন তিনি। তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল। উত্তম কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, আমি পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে থেকে প্রশাসক ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি চেষ্টা করেছি জনগনের সঙ্গে থেকে কাজ করার। জনগণ ও দল চাইলে আমি পৌর নির্বাচনে আবার অংশ নেব। অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এবারে পৌর নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে পৌরবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন।অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, দল আমাকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামী যদি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী না দেয় তাহলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন বলেও আশা করছেন।তবে স্থানীয় অনেকেই বলছেন, প্রকাশ্যে না এলেও নির্বাচন সামনে রেখে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রংপুর জেলা ইট-ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হকের  নাম শোনা যাচ্ছে। কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংসদের সাবেক নির্বাচিত এজিএস ছিলেন তিনি। সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনিও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমি গতবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। পৌরবাসী আমাকে সন্মানজনক ভোট দিয়েছিলেন। আশা করছি, তারা এবার আমাকেই ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন। এছাড়াও রয়েছেন প্রয়াত যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর হাত ধরে ছাত্র রাজনীতিতে আসা পলিন চৌধুরী। তিনি বর্তমানে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্ভাব্য চার প্রার্থীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণ এই প্রার্থী জনগণের মাঝে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। তিনিও পৌরবাসীকে ঈদ ও দূর্গাপুজার শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড, পোস্টারে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছেন।সম্ভাব্য প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরি পলিন জাগো নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। এখন আমি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আশা করছি, এবার আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। মনোনায়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনিও বেশ আশাবাদী বলে জানান।অপরদিকে, এক সময়ের দূর্গ বলে খ্যাত জাতীয় পার্টির পক্ষে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এছাড়া এ আসনের বর্তমান সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তাই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওযামী লীগ। তবে জয়ের ব্যাপারে অন্য প্রার্থীরা আশাবাদী হলেও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে ভোটাররা জানান।বদরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক জাগো নিউজকে বলেন, পৌর নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পছন্দ অনুযায়ী মেয়র প্রার্থী বাছাই করা হবে। রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা জাগো নিউজকে জানান, স্থানীয়ভাবে তাদের অবস্থান ভালো। যদি তারা নির্বাচন করেন তাহলে তাদের মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার জাগো নিউজকে জানান, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য উপজেলা নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারাই যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।এমজেড/আরআইপি

Advertisement