দেশজুড়ে

দলীয় মনোনয়ন পেতে রাঙামাটিতে প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছেন রাঙামাটি পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের তৎপরতা ক্রমে জোরালো হয়ে উঠছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে দোঁড়ঝাপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য এসব প্রার্থী। দলীয় সমর্থন আদায়ে জোর লবিংয়ে তৎপর তারা। পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।এদিকে, রাঙামাটি পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন এবং কোন দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা ঝড় শুরু হয়েছে ভোটারদের মাঝেও। নির্বাচন নিয়ে আলোচনা জমে উঠছে পৌর এলাকাব্যাপি। অফিস, পাড়া, হোটেল, রেঁস্তোরা, চায়ের দোকানসহ আলোচনা এখন সর্বত্র। জানা যায়, ১৯৭২ সালে গঠিত হয় রাঙামাটি পৌরসভা। বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা এটি। পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৭০৮। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ৩৩ হাজার ২৯৯ এবং মহিলা ২৬ হাজার ৪০৯। এ পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে এবার মেয়র পদে বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থীর দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি কারা তা স্পষ্ট হবে তফসিল ঘোষণার পরেই। দলীয় নির্বাহী নেতারাও বলছেন একই কথা। তারা বলছেন অনেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টায় আছেন। তফসিল ঘোষণার পরেই দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত করা হবে। আগে তফসিল ঘোষণা হোক। তারপর দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। রাঙামাটি পৌরসভার এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী মেয়র পদে দলীয় সমর্থন আদায়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বতন্ত্র হয়ে আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সমর্থন আদায়ে লবিং করছেন এমন কয়েক সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও আলোচনায়। আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ছয়, বিএনপির পাঁচ ও জনসংহতি সমিতির দুই প্রার্থী দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য লবিং করছেন বলে জানা গেছে।মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যারা লবিং শুরু করেছেন। তারা হলে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আকবর হোসেন চৌধুরী। তিনি বর্তমানে জেলা যুবলীগের সভাপতি। এর আগে দীর্ঘদিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি।   আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজনীতি করি কেবল দলের জন্য- সর্বোপরি আপামর জনগণের কল্যাণে এবং সুখ, দুঃখে পাশে থেকে তাদের সেবার জন্য। কেন না দল হচ্ছে জনগণের, দলের কাজ জনগণের জন্য। তাই পৌর এলাকার উন্নয়ন এবং পৌরবাসীর সেবায় মেয়র পদে নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা। জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেজন্য দলীয় মনোনয়ন আশায় আছি। এবারও দলীয় সমর্থন আদায়ে তৎপর সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি এর আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালের নির্বাচনে পর পর দুইবার রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। হাবিবুর রহমান বলেন, পৌরসভার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। যে কারণে পৌরবাসীর কাছে আমি জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম। তারা আমাকে আবারও মেয়র পদে দেখতে চান। সেজন্য এবার নির্বাচনে দলীয় সমর্থন প্রত্যাশী। আর নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার উন্নয়নে আরও কাজ করতে চাই।  নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে চান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সোলায়মানও। সোলোয়মান বলেন, দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের জন্য কাজ করে আসছি। তাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল মতিন। তিনি গত নির্বাচনে রাঙামাটি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে তার অবস্থান ছিল তৃতীয়। এছাড়াও রাঙামাটির সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেলিম এবং ছাত্রলীগ নেতা শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান এবার পেরৗসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইছেন বলে জানা গেছে। জাকির হোসেন সেলিম গত সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদের রাঙামাটির সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ফিরোজা বেগম চিনু। কিন্তু পৌর আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগে পদ-পদবিতে বঞ্চিত। তাই এবার রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতার দাবি করছেন এসব সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী মূছা মাতব্বর বলেন, পৌর নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেক প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হবে। এজন্য ৯ সদস্যের একটি বোর্ড কমিটি গঠন হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। তবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকেও আসন্ন রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। মনোনয়নের জন্য বিএনপির একাধিক প্রার্থী ইতোমধ্যে লবিং শুরু করছেন। দলীয় সমর্থন আদায়ে জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র ও জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাসেত অপু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপি নেতা অ্যাড. মামুনুর রশীদ মামুন ও বর্তমান ৭নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি। মাহবুবুল আলম বাসেত অপু গত রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। আসন্ন রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো ও মাহবুবুল আলম বাসেত অপুর সম্ভাবনা বেশি বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।   এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড থেকে এখনও চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি। তবে আমরা নির্বাচনে প্রস্তুত। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেব। দলীয় প্রার্থী নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনে অংশ নিলে মেয়র পদে অবশ্যই একজন যোগ্য প্রার্থী দেয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পর পরই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হবে। এছাড়াও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে এবার রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে লড়বে আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এমন কথা শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতার মাধ্যমে। জানা গেছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির সমর্থন আদায়ে চেষ্টায় আছেন সংগঠনটির জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক ডা.গঙ্গা মানিক চাকমা এবং বর্তমান ৮নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট সংস্কৃতি সংগঠক কালায়ন চাকমা। পৌর কাউন্সিলরের পাশাপাশি কালায়ন চাকমার রয়েছে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে বহুল পরিচিতি। গত পাঁচ বছরে পৌর কাউন্সিলর হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও লাভ করেছেন তিনি। অপর প্রার্থী চিকিৎসক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ডা.গঙ্গা মানিক চাকমার পরিচিতিও বহুল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি থেকে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে কিনা ? তা এখনও দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য এ ব্যাপারে ব্যাপারে দলে চিন্তা-ভাবনা চলছে। সময় হলে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এআরএ/পিআর

Advertisement