দেশজুড়ে

মাগুরায় ভোটারদের মন জয়ে ব্যস্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনী হওয়া বইতে শুরু করেছে মাগুরায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক ডজনেরও বেশি মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মেতে উঠেছেন। তবে জামায়াতের কোনো মেয়র প্রার্থীকে এখনও মাঠে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ও জনসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। যে কেনোভাবে ভোটারদের মন জয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সাম্ভব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীরা মাঠে-ঘাটে এবং হাটে-বাজারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আসায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সন্তুষ্টি লাভের জন্যও দৌড়ঝাঁপ শরু করেছেন। শহরের আনাচে কানাচে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের অন্তত ছয়জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপি থেকেও শোনা যাচ্ছে তিনজন প্রার্থীর নাম। তাদের মধ্যে বর্তমান মেয়রও আছেন। শেষ মুহূর্তে বিএনপি থেকে আরো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে গুণজন শোনা যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে দলটির জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ঘোষণা আসায় তারা এখনও কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন ৬৫ হাজার ৫৮৯জন। ১৯৯৩ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার সময় নতুন কয়েকটি গ্রামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এসব এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি আজও। এর মধ্যে পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের আওতাধীন কাঁশিনাথপুর (চারাবটতলা) নামক গ্রামটি অন্যতম। রাস্তাঘাটসহ নেই পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সুবিধা। কিন্তু পৌরসভার সুযোগ সুবিধা না পেলেও এসব এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন খাতে উচ্চ কর গুণতে হচ্ছে প্রতি বছরই। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন বিজয়ী হন। তিনি ওই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবীণ এ রাজনীতিক মারা গেলে ওই বছরের মে মাসে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আকতার খান কাফুর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র আলতাফ হোসেনের ছেলে খুরশিদ হায়দার টুটুলও প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যশ-খ্যাতি অর্জন করতে না পারায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আর্বিভাব ঘটে। ফলে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হন। জানা যায়, নিজনান্দুয়ালী এলাকার বকাটে যুবকরা তার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে থাকে প্রতিনিয়তই। ইতিমধ্যে বছর দুয়েক আগে খাবার প্যাকেট বন্টন নিয়ে খুন জখমেরও ঘটনায় ব্যাপক আলোচিত হন প্রয়াত এ প্রবীণ ও বর্ষিয়ান নেতার ছেলে খুরশিদ হায়দার টুটুল।একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র ইকবাল আকতার খান কাফুর উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হলেও তিনি জনগণের আশা পূরণ করতে পারেননি। তিনি মাগুরা শহরের রাস্তাঘাঠের বেহার দশার কারণে বহুবার সমালোচিত হয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি কিছু রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের পর বিএনপির টিকিট পেতে তৎপরতা শুরু করেছে কাফুর। যদিও তার বিরুদ্ধে সরকারি দলের সঙ্গে গোপন আঁতাতসহ সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় দিশেহারা নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ইকবাল আকতার খান কাফুর জাগো নিউজকে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার পরও তিনি অল্প সময়ে পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণের চেষ্টা করছেন। তবে দলের সমর্থন না পেলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।এছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফারুক ও জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান খান পিকুল। দলীয় টিকিট পেতে তারা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, মামলা ও প্রশাসনের চাপে প্রার্থিতা নিয়ে আগ্রহী অনেক নেতাই মুখ খুলছেন না। তবে শেষ মুহূর্তে বিএনপি থেকে আরো প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ছয় প্রার্থী। তাদের পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাস্তার অলিগলি। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়েও জনসংযোগ ও কর্মী সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় সমর্থন লাভের আশায় শীর্ষ নেতাদের মন জোগাতে চেষ্টা অব্যাহত রাখছে। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি রেজাউল হক এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- প্রয়াত মেয়র আলতাফ হোসেনের ছেলে খুরশিদ হায়দার টুটুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক অ্যাড. শাখারুল ইসলাম শাকিল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা আমির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান খোকন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাড. রফিকুল আকবর নান্নার ছেলে অ্যাড. মাহবুবুল আকবর কল্লোল। এর বাইরে আলোচনায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাগুরা-২ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ আছাদুজ্জামানের ছেলে আনিচুজ্জামান সাচ্চু। প্রার্থীরা সবাই জানিয়েছেন, দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক তারা প্রার্থিতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হাসান সিরাজ সুজা মেয়র পদে প্রার্থিতার আভাস দিয়েছেন। তিনিও নিজ দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র পার্থী হিসাবে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র তপন কুমার রায়। ক্ষমতাসীন দলের একাংশের সঙ্গে তাল দিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণ করছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।আসন্ন পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু জাগো নিউজকে জানান, বড় রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক নেতা প্রার্থিতার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থিতার ব্যাপরে কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সভাপতি কবির মুরাদ জাগো নিউজকে জানান, অনেক প্রার্থী আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তবে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত নয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরে যে নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই কাজ হবে।আরাফাত হোসেন/এআরএ/পিআর

Advertisement