বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের অব্যাহত ডাকাতি, হত্যা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির প্রতিকার এবং অপহৃত জেলেদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বরগুনার ছয়টি উপজেলার কয়েক হাজার জেলে। পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মরকলিপি দেয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে জেলারা জলদ্যুদের হাতে হতাহত, নিখোঁজ ও অপহৃতদের পরিবারকে পুনর্বাসন এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্লোগান দেন। পাশাপাশি তারা বঙ্গোপসাগরে নৌ-বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি এবং বরগুনার পাথরঘাটার একটি স্থায়ী নৌ-ঘাঁটি স্থাপনের দাবি জানান।সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এবং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আ. মান্নান মাঝিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলামের হাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন তারা। আন্দোলনরত জেলা ট্রলার মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জাগো নিউজকে জানান, পাথরঘাটায় কোস্টগার্ডের স্থায়ী ঘাঁটি থাকা সত্বেও গভীর সমুদ্রে জলদস্যুদের অব্যাহত অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীসহ তাদের পরিবার।তারা আরো জানানা, গত দশ বছরে গভীর সমুদ্রে জলদস্যুদের হাতে এ পর্যন্ত শতাধিক জেলে নিহত হয়েছে, ডকাতির শিকার হয়েছে প্রায় দশ হাজার ট্রলার। আর অপহৃত হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি জেলে। ডাকাতি করে মাছ-ট্রলার-জাল এবং খুচরা যন্ত্রাংশ লুন্ঠনসহ মুক্তিপণ হিসেবে দরিদ্র জেলেদের কাছ থেকে জলদস্যুরা হাতিয়ে নিয়েছে হাজার কোটিরও বেশি টাকা। আন্দোলনরত জেলেরা জাগো নিউজকে জানান, বঙ্গোপসাগরের চান্দেশ্বর, নারকেলবাড়িয়া, মান্দারবাড়িয়া, সোনারচর, মেহেরআলী, কচিখালি, পক্ষিদিয়া, ফেয়ারওয়েবয়া ও বলেশ্বরের মোহনাসহ প্রায় ২০টি পয়েন্টে সুদীর্ঘ বছর ধরে জলদস্যুদের উৎপাত চলছে। এর ফলে জেলেদের এখন সাগরে মাছ ধরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।বরগুনা জেলে ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়রে সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি জাগো নিউজকে জানান, গত ২২ ও ২৩ আগস্ট বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় জেলে বহরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মাছ-জাল এবং খুচরা যন্ত্রাংশ লুণ্ঠনসহ মুক্তিপণের জন্য ২৬ জেলেকে সুন্দরবনের গহীনে ধরে নিয়ে যায়। পরে জলদস্যুদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগযোগ করে স্থানীয় ট্রলার মালিকরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে খুলনা এবং বাগেরহাটের দুর্গম এলাকা থেকে তাদের মুক্ত করে আনেন।বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে জলদস্যু র্নিমূলের জন্য সরকারকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেন বরগুনা জেলে ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়রে সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি। এ সময় তিনি বলেন, আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে যদি সমুদ্র থেকে জলদস্যু র্নিমূল করতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ করে দেবে এবং হাজর হাজার জেলে তাদের পরিবারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে। বরগুনা জেলা মৎসজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চেীধুরী জাগো নিউজকে জানান, গত ২৬ অক্টোবর রাতে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে মাছ ধরারত জেলে বহরে হামলা চালিয়ে মাছ, জাল, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং নগদ অর্থ লুটে নেয় জলদস্যুরা। এ সময় তিনটি ট্রলারসহ ৪০ জেলেকে তারা অপহরণ করে সুন্দুরবনের গহীনে নিয়ে যায়।তিনি আরো জানান, ডাকাতির সময় জলদস্যুরা নির্বিচারে গুলি ছুড়লে, তাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. আল-আমীন, মো. নাঈম এবং মো. রাজু নামের তিন জেলে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। আর অপহৃত ৪০ জেলের মধ্যে ১৫ জেলেকে জলদস্যুদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগযোগ করে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা গেলেও বাকি ২৫ জেলেকে টাকার অভাবে এখনো মুক্ত করা যায়নি। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে না পারা ওই সব জেলেদের অমানবিক নির্যাতন করছে দস্যুরা। নির্যাতনের ওই সব জেলেদের স্বজনদের মোবাইলে ফোন দিয়ে জলদস্যুরা জেলেদের আর্তচিৎকার তাদেও স্বজনদের শোনানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ সময় তিনি জলদস্যুদের হাতে আটক ২৫ জেলেকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।এ সময় বরগুনা জেলা মৎসজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চেীধুরী বলেন, জলদস্যু র্নিমূল করা এটা আমাদের দাবি নয় বরং এটা আমাদের প্রাপ্য। সুদীর্ঘ বছর ধরে সরকার আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। আজকের পর থেকে যদি সাগরে আর কোনো ট্রলার ডাকাতি ও জেলে অপহরণের ঘটনা ঘটে, তাহলে উপকূলীয় জেলেদের নিয়ে ঢাকায় অবস্থান নেবো।এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, উপকূল জুড়ে সুদীর্ঘ বছর ধরে জলদস্যু সমস্যা বিরাজ করছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকার জলদস্যু র্নিমূলে অনেক বেশি সতেষ্ট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলে ও ট্রলার মালিকদের দেয়া স্মারকলিপি তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠিয়ে দিবেন।সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এআরএ/আরআইপি
Advertisement