কৃষি ও প্রকৃতি

করোনার ক্ষতি পোষাতে আবার ফুলের চারা রোপণ

নতুন উদ্যমে খেতে ফুলের চারা রোপণে ব্যস্ত ঝিনাইদহ সদরের গান্না-পাইকপাড়া গ্রামের দুই ভাই সাজু মন্ডল ও সাহাবুল ইসলাম। করোনার কারণে ফুল বিক্রিতে ধস নামায় তাদের লোকসান হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। ফলে সেই জমিতে শসার চাষ করেছিলেন তারা। এমন চিত্র জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ ফুল উৎপাদনকারী এলাকার চাষিদেরও।

Advertisement

অব্যাহত লোকসানে দিশেহারা চাষিদের অনেকেই ফুলের পরিবর্তে ধান কিংবা সবজির চাষ করেছিলেন। আশাহত হননি কেউ। দুর্দিন শেষে সামনে আসবে সুখের দিন, মিলবে ফুলের ভালো দাম, কেটে যাবে লোকসান, হবে লাভবান।

অনেক ফুল চাষিই এখন এমন স্বপ্ন বুনছেন। সেই স্বপ্নে কেউ নতুন করে চারা রোপণ করছেন কেউবা রোপণ করা চারা পরিচর্যা করছেন ফুলের মান ভালো রাখতে। এখন থেকে গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যা করা গেলে দেড় থেকে দুই মাস পর ভালো মানের ফুল পাওয়া যাবে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় করোনা সংক্রমণের আগে ফুলের আবাদ ছিল ১৭৬ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে লাভজনক এ আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে। এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

Advertisement

নতুন করে ফুলের চাষ করা সাজু মন্ডল জাগো নিউজকে জানান, সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবস। ফুলের ভালো দাম হবে এ আশায় এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চারা রোপণ করছি। আশা করি করোনার মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে পারবো। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে রোপণের জন্য আট হাজার চারা কিনেছি তিন হাজার ২০০ টাকায়।

ফুল চাষি সফিকুল ইসলাম জানান, করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গরম জাতের গাঁদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় খেতের ফুল তুলে একবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যে কারণে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান দেড় লাখ টাকার মতো।

তিনি আরো জানান, সেই সময় ফুল গাছ কেটে ধান লাগিয়েছিলাম আর অল্প একটু জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। যে জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম সেখানে এখন পুনরায় ফুল আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করবো। অন্যান্য ফুল চাষিরা জানান, ফুল চাষই আমাদের সম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশা করি পুনরায় ভালো দাম পাওয়ার মাধ্যমে আমরা সফলতা বা লাভের মুখ দেখতে পারবো।

জেলার সব থেকে বড় গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা অনাদায়ী হয়ে গেছেন। ঢাকা, কুমিল্লাসহ বড় বড় শহরের ব্যাপারীদের কাছে আমাদের টাকা আটকে আছে। তারা টাকা দিচ্ছেন না।

Advertisement

সামনের দিনগুলোতে যদি করোনার সংক্রমণ কমে যায় কিংবা সরকার যদি কমিউনিটি সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবসসহ উৎসব উদযাপনের অনুমতি দেয় তাহলে ফুলের চাহিদা বাড়বে। এতে আমরা পাওনা প্রাপ্তির পাশাপাশি আবার ব্যবসায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সামনের দিনগুলোতে চাষিরা যাতে ভালোমানের ফুল পেতে পারেন এ জন্য তাদের উন্নতমানের চারা রোপণ, রোগ-বালাই দমন থেকে শুরু করে দেওয়া হচ্ছে কারিগরি পরামর্শ। সাথে কম জমিতে কীভাবে বেশি ফুল উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএমএফ/জেআইএম