ক্যাম্পাস

বাঁওড়ে ফিরছে ৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ

>> দেশি মাছের জিন ও ব্রুড ব্যাংক হবে বাঁওড়>> ভাগ্য ঘুরবে ৮৪ হাজার মানুষের>> মাছগুলো ডিম দিচ্ছে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে

Advertisement

দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বিলুপ্তির পথে। যেকোনো সময় বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যেতে পারে মাছগুলো। তবে এই শঙ্কার মধ্যে সুখবর দিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। তারা বলছেন, আট দেশি প্রজাতির মাছ বাঁওড়ে মজুত করা সম্ভব হয়েছে। এটিকে বাঁওড়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে চলমান একটি প্রকল্পের প্রথম সফলতা হিসেবে দেখছেন তারা। এভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ফেরানো গেলে বাঁওড়নির্ভর ৮৪ হাজার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলে প্রত্যাশা গবেষকদের।

শিক্ষকদের এ গবেষণার উদ্দেশ্য বিলুপ্তির পথে থাকা দেশীয় মাছের প্রাচুর্যতা ফিরিয়ে আনা, বাঁওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাঁওড়-সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর উপার্জন ও পুষ্টিচাহিদা পূরণ।

এ গবেষণা প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের এই অধ্যাপক জানান, ঝিনাইদহের সার্জাত ও সাগান্না এই দুটি বাঁওড়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক বছর শেষ না হতেই আট প্রজাতির মাছ বাঁওড়ে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। যার মধ্যে কই, শিং, দেশি মাগুর, পাবদা, গুলশা, টেংরা, ছোট টেংরা, বাজারী টেংরা এবং টাকি মাছ রয়েছে। এগুলো পার্শ্ববর্তী বিল এবং নদী থেকে সংগ্রহ করে বাঁওড়ে মজুত করা হয়েছে।

Advertisement

সর্বশেষ গত আগস্টে পাবদা, গুলশা, টেংরা প্রজননের বিষয়টি জানতে পারেন গবেষকরা। এছাড়া বাকি দেশি মাছগুলোও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন করছে বাঁওড়ে দুটিতে। মাছগুলো ডিম দিচ্ছে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ৫০টি প্রজাতির দেশি মাছ আছে। ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও সেগুলো সচারচর নদী-নালা, খাল-বিল ও বাঁওড়গুলোতে পাওয়া যেত। তবে বিদেশি কার্প প্রজাতির মাছগুলোর অত্যধিক চাষ, জলবায়ু পরিবর্তন ও কিছুটা মানবসৃষ্ট কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশি মাছের অস্তিত্ব। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত হয়েছে বেশকিছু দেশি (যেগুলো আকারে ছোট) মাছের প্রজাতি।

২০২২ সালের জুনে এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গবেষকরা আশা করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁওড়ে দেশি মাছের প্রাচুর্যতা ফেরানো সম্ভব হবে।

গবেষণার সহকারী প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ইয়ামিন বলেন, ‘প্রজেক্ট শেষে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে আশা করি। বাকি বাঁওড়গুলোতেও চাষের উদ্যোগ নেয়া যাবে। আর বাঁওড়ের সুফলভোগীদের জন্য নীতিমালা থাকায় ফেরানো মাছগুলো বাঁওড়ে স্থায়ীত্ব পাবে। এতে দেশি মাছের জিন ব্যাংক ও ব্রুড (মা মাছ) বাংকে রূপ নেবে বাঁওড়গুলো। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বাঁওড়গুলোতে বার্ষিক গড় মৎস্য উৎপাদন ৭,৭২৯ মেট্রিক টন দেশি মাছ উৎপাদন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

Advertisement

গবেষণা প্রকল্পটির প্রধান গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিন বলেন, ‘এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ। আমরা যে মা মাছগুলো বাঁওড়ে মজুত করেছিলাম, সেগুলো ডিম দিয়েছে এবং বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে আট প্রজাতির মাছগুলোর মধ্যে গুলশা, টেংরা অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যাচ্ছে।’

২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে বাঁওড়ে মাছ চাষের এ প্রকল্প পূর্ণ সফলতা পাবে বলে আশা করছেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, আমরা যে মাছগুলো বাঁওড়ে ছাড়ছি সেগুলো আহরণ করেও জেলেরা সুবিধা পাচ্ছেন। মাছগুলোর দেখভাল ওই অঞ্চলের জেলেরাই করছেন। তারা মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের গবেষণার সঙ্গে জড়িত বলে জানান অধ্যাপক সালেহা জেসমিন। তারাই নিয়মিত বাঁওড়গুলোর মাছের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।

এদিকে বাঁওড়গুলোতে মাছের বৈচিত্র্য সূচক নির্ধারণের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে সহায়তা করছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষক দল।

এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব ব্যাংক। সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।

সালমান শাকিল/এসআর/এমকেএইচ