ফিচার

মানবিক কাজে বড় সফলতার গল্প

বেনজীর আবরার

Advertisement

মার্চের শেষদিকে লকডাউন পড়ে গেল। তাজদীন হাসানের স্ত্রী পত্রিকায় পড়ছিলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের রিকশাশ্রমিকরা দিনে ১০০ টাকা উপার্জন করে সংসার চালান’। তারা বলছেন, ‘লকডাউনে তারা কী করবেন, কিভাবে চলবেন!’

তাজদীন হাসানকে জানালেন তার স্ত্রী। তিনি তার বেতনের একটি অংশ দান করতে চান! তাজদীন ভেবে দেখলেন, কোথায় দেওয়া যায় অনুদান, কোথায় দিলে টাকাটা পৌঁছবে সঠিক মানুষের হাতে।

গল্পটি শুনি তাজদীন হাসানের মুখেই, আমি তাৎক্ষণিক কল দিলাম সেবা এক্সওয়াইজেডের প্রতিষ্ঠাতা আদনান ভাইকে। কারণ তারা এ ধরনের মানুষ নিয়ে কাজ করেন। তার কাছে একটি লিস্ট থাকতে পারে। আদনান ভাই কথায় কথায় বললেন, তাজদীন চলেন আমরা নিজেরাই ডোনেট করি। আমি তাৎক্ষণিক বন্ধু ইমরান কাদিরের সাথে আলোচনা করি। ও বলল, চলো কাজে নেমে পড়ি। দ্রুত বসলাম তিন জন, কী করা যায়!

Advertisement

প্রথম বসায়ই নাম ঠিক করলাম ‘মিশন সেভ বাংলাদেশ’। প্রথম চিন্তায়ই ডিওএইচএসগুলোর মাধ্যমে তাদের রেজিস্ট্রার্ড ১২০০ রিকশাচালকের সন্ধান পেলাম। যারা ওই এলাকায় রিকশা চালাতেন। ইউনিমার্ট আমাদের পাশে দাঁড়াল। হাজার টাকার মধ্যে তারা একটি প্যাকেজ করে দিলো। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আছে এক সপ্তাহের জন্য।

আমরা দেখলাম বিষয়টিতে সব ব্যাপারে যেন হিসেব ঠিক রাখা যায়। আমরা এসএসএল ওয়্যারলেসের সাথে আলোচনা করাতে তারা পেমেন্ট সুবিধা বিনা চার্জের করে দিলো। মানুষের মধ্যে অভুতপূর্ব সাড়া পেলাম। ঠিক এমন এক সময়ে আমাদের মনে হলো, কর্পোরেটের মানুষদেরও আমরা জানাতে পারি। জানালাম মমিন ইউ ইসলাম, রোকেয়া আফজাল ও এজাজুর রহমানকে!

তারা কোনো চিন্তা ছাড়াই হ্যাঁ বলে দিলেন! ফলে ১২০০ লোকের জন্য ব্যবস্থা করতে গিয়ে ব্যবস্থা করে ফেললাম ২২ হাজার লোকের!

এরপর আরও বড় বাজারে সোর্সিং করলাম। ৭৫০ টাকার মধ্যে সব পেয়ে গেলাম! অসহায় মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পাঠাও, পেপারফ্লাইসহ অনেকেই কুরিয়ার সাপোর্ট দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অনেক সহযোগিতা করেছেন। সাথে ছিল সেবা প্লাটফর্মের ভলান্টিয়ার টিমের প্রাণান্ত চেষ্টা।

Advertisement

এরপর করলাম ভিন্ন এক কাজ! কর্পোরেটের একেক প্রতিষ্ঠানের কাছে একেক রকম করে বললাম। কেউ ২০টির দায়িত্ব নেন, কেউ ৫০ বা ১০০টির!

যারা আমাদের পাশে দাঁড়ালেন, সবার লোগো দিয়ে ব্রান্ড বোর্ড দিলাম। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির জায়গায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান পাশে দাঁড়ালো। ৫০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে গেল মিশন সেভ বাংলাদেশ। সাথে ১১০টি ব্রান্ড যুক্ত হলো পুরো কাজটিতে।

আমরা মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রজেক্টকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টের জন্য সহায়তা, ডেডিকেটেড কল সেন্টার চালু, ফেসবুকের পেজে কেউ নক করে সহযোগিতা চাইলে; তাকে জাস্টিফাই করে খাবার পৌঁছানোর মত কাজ নিয়মিত করেছি!

এবার ইমরান কাদির যোগ করলেন। বললেন, আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাজদীন। আমরা ঠিক করেছি তিনটি জায়গায় কাজ করবো- নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এবং চাকরির দক্ষতা বাড়াতে তরুণদের পাশে থাকার।

এরমধ্যে মিলেছে বড় স্বীকৃতি। সম্প্রতি ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ জিতেছে মিশন সেভ বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতে এ ঘোষণায় বেশ আশার সঞ্চারও ঘটেছে তরুণ প্রাণগুলোয়। ভালো কাজের বড় স্বীকৃতি!

মিশন সেভ বাংলাদেশের খবর এসেছে পৃথিবীর প্রায় সব নামকরা গণমাধ্যমে। কাজের প্রথম দিকেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ‘সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন’ যুক্ত হয়েছিল মিশন সেভ বাংলাদেশের সাথে। এরকম সমর্থন এ মানবিকতার গল্পকে রূপ দিয়েছে অসামান্য এক রূপে।

তিন যুবকের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হয়ে উঠেছিল তাদের নেটওয়ার্ক। তারা গণমাধ্যমের বন্ধু-বান্ধবদের কাছেও খুব বড় ভাবে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন, যাতে বড় সাফল্য এসেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তাজদীন হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘নানা ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের ফাউন্ডেশনকে গড়েছি দেশের একটি দরকারে। এটা সব সময় এ ধরনের কাজ করে যাবে।’

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিলেন্স বাংলাদেশ।

এসইউ/জেআইএম