অর্থনীতি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : পোশাক খাতে বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে?

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর ফলে এক সময় অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে ধীরে ধীরে আবার সব স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। অর্থনীতির চাকা অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি বরং প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বলা হচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ধাপটা আরও ভয়াবহ হবে।

Advertisement

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়াল থাবা হানা দিতে পারে দেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পে। কোভিড মোকাবিলায় পোশাক শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তায় ব্যবস্থা রয়েছে। এটা অব্যাহত রেখে উৎপাদন ধরে রাখার কথা বলছেন উদ্যোক্তারা। করোনার প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপে বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই বরং আগের প্রস্তুতিতেই কোভিডের দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলা সম্ভব। আর সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সামগ্রিক নিরাপত্তার উন্নতি না করতে পারলে কারখানা বন্ধ করার পক্ষে শ্রমিক নেতারা।

তারা বলছেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার, মালিক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে এগুতো হবে।

দেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ দিকে কোভিডের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে পোশাক খাতে, গত মার্চের শুরুর দিকে বড় রকমের সঙ্কট দেখা দেয় এ খাতে। কমে আসে রফতানি, ওই সময়ে অনেক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নেয় পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা। নিজস্বভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকধারা জোনভিত্তিক কেন্দ্র চালু হয়, শ্রমিকের শরীরে বাড়তি কোনো তাপমাত্রা দেখা দিলেই কারখানা কিংবা বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়। সুস্থ হয়ে কাজে ফেরার আগমুহূর্ত পর্যন্ত এর ব্যয়ভার সব বহন করে উদ্যোক্তারা।

বিশ্বব্যাপী যখন করোনা দ্বিতীয় ধাপের ভয়াবহতা নিয়ে আশঙ্কা করার কথা বলা হচ্ছে তখন পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোভিড মোকাবিলায় বাড়তি কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আর শ্রমিক নেতাদের দাবি, এর ভয়াবহতার কথা ভেবে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন। সরকার ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কারখানায় উৎপাদন করতে হবে। নিরাপত্তার জোরদার করতে না পারলে কারখানা বন্ধ করাই ভালো পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতিসহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে মতে, সম্প্রতি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ- এ অবস্থায় পোশাক কারখানাও বন্ধ থাকা প্রয়োজন। তবে অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, করোনার দ্বিতীয় ধাপের কথা মাথায় রেখে শ্রমিকের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে, এতে দেশের কথা ও জনগণের কথাও ভাবতে হবে।

শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন বলেন, প্রথমমত কারখানা বন্ধের ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এই মুহূর্তে কারখানা বন্ধের মতো অবস্থা হয়নি, সরকারের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে যেটা সে অনুযায়ী চলা উচিত। করোনার দ্বিতীয় ধাপ আসছে, মৃত্যু ও আক্রান্ত সংখ্যাও বাড়ছে। আমাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। মাস্ক ও হাত ধোয়ার বিষয়টি প্রতিটি নাগরিকের মেনে নেয়া উচিত। শ্রম ক্ষেত্রে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা কঠিন, কারখানায় সম্ভব হলেও রাস্তায় বেরুলে এটা এলোমেলো হয়ে যায়। এটা বাস্তবতা, এটা মেনেই আমাদের এগুতো হবে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ হয়তো যুক্তি দেবে, তবে অবশ্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে, শ্রমিকের বাড়তি নিরাপত্তা না দিতে পারলে কারখানা চালু রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আগে শ্রমিক বাঁচাতে হবে, তাকে নিরাপত্তা দিতে হবে, সব কিছু করেই আমাদের উৎপাদনে থাকতে হবে।

Advertisement

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোভিড মোকাবিলায় পোশাক খাতে নেয়া প্রথম পদক্ষেপ চলমান। কারখানায় প্রবেশের আগে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা আছে, মুখে সবাই মাস্ক পরে আসছেন, সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে কাজে যোগদান করছেন। প্রতিটি শ্রমিকের শরীরে ব্লিচিং পানি ছিটানো হচ্ছে, তাদের তাপমাত্র মাপা হচ্ছে। কোনো শ্রমিকের শরীরে বেশি তাপমাত্রা হলে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে বা কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলেও বাড়তি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন নেই।

জেএইচ/জেআইএম