গত দশকে (২০১০-২০১৯) দ্রুতগতিতে এগিয়েছে নারী ক্রিকেট। চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে যেখানে নারী ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে মাত্র ৪৮৬টি, সেখানে ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে প্রায় তিনগুণ বেড়ে মাঠে গড়িয়েছে অন্তত ১২৩৭টি নারী ক্রিকেট ম্যাচ।
Advertisement
এই বর্ধিত ম্যাচের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে নারী ক্রিকেটারের সংখ্যাও। ২০০০ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে ৬৬২ জন নারী ক্রিকেটারের। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়টায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম লিখিয়েছেন ১৪৫৫ জন নারী ক্রিকেটার।
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেড়েছে নারীদের ম্যাচ সংখ্যা। পুরুষদের পাশাপাশি শুরু হয়েছে নারীদের বিভিন্ন ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগও। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ৯টি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ তাদের নারী ক্রিকেটারদেরও বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির মধ্যেই রাখে।
খেলার পরিধি বাড়ার সঙ্গে নারী খেলোয়াড়দের ভক্ত-সমর্থকও বেড়েছে বহুগুণে। গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়ার এলিস পেরি, ম্যাগ লেনিং ও অ্যালিসা হিলি, ভারতের হারমানপ্রিত কৌর, নিউজিল্যান্ডের সুজি বেটস, ও সোফি ডিভাইন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টেফানি টেলর, দেয়ান্দ্র ডটিন ও আনিস মোহাম্মদ, ইংল্যান্ডের সারাহ টেলর ও ক্যাথরিন ব্রান্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার শাবনিম ইসমাইলরা বনে গেছেন বিশ্ব তারকা।
Advertisement
এখন দেখার বিষয় নারী ক্রিকেটের আগামী এক দশক (২০২০-২০২৯) কারা হন বিশ্ব তারকা, কাদের পারফরম্যান্সের দ্যুতিতে ভাস্বর হবে বিশ্ব ক্রিকেট। জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো সাজিয়েছে এমনই তালিকা, যারা হতে পারেন চলতি দশকের সেরা খেলোয়াড়। যেমনটা তারা গত জুনে করেছিল, পুরুষ ক্রিকেটারদের নিয়ে।
এবার বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এমন ২০ নারী ক্রিকেটারের নাম প্রকাশ করেছে ক্রিকইনফো। সেখানে রয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বাঁহাতি ওপেনার মুর্শিদা খাতুন হ্যাপি। খুলনার ২১ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৫ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
মূলত ভারতের বিপক্ষে সবশেষ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে সবার নজরে আসেন মুর্শিদা। সেদিন দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন তিনি। যে কারণে আগামী দশকের সম্ভাবনাময় তারকাদের তালিকায় মুর্শিদাকেও রেখেছে ক্রিকইনফো।
বাংলাদেশের এ ক্রিকেটারের ব্যাপারে যা লিখেছে ক্রিকইনফো, তা অনুবাদ করে দেয়া হলো
Advertisement
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একমাত্র বাঁহাতি ব্যাটার মুর্শিদ খাতুন, যিনি খুলনার সন্তান এবং ডাকনাম হ্যাপি। ছোট বয়সে বাংলাদেশ পুরুষ দলের বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাটিং দেখে খেলাটির প্রেমে পড়ে যান। পরে ভারতের নারী ক্রিকেটার স্মৃতি মান্ধানাকে দেখে খেলায় নাম লেখানোর সাহস পান।
মান্ধানার মতো মুর্শিদাও অফসাইডে দারুণ খেলেন, বিশেষ করে কভার ড্রাইভ করেন দর্শনীয় ভঙ্গিমায়। যা তাকে একজন বৈচিত্রপূর্ণ ওপেনার বানিয়েছে। চলতি বছরের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলা ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংসটি প্রমাণ দিয়েছে যে, তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ এগিয়ে নিতে পারবেন।
আমার (মুর্শিদা) হিরো: আমার মা, হাওয়া খাতুন। জীবনে এখন পর্যন্ত যতটুকু সমর্থন আমি পেয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্ত পিলার আমার মা। আমি যখন মানসিকভাবে বাজে অবস্থায় থাকি, তখন মায়ের সঙ্গেই সময় কাটাই। এমনকি সেটা যদি দশ মিনিটও হয়, তবু আমার মন খারাপের ভাব চলে যায়। ক্রিকেটকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন মা।
বড় স্বপ্ন: ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে থাকতে চাই আমি এবং কয়েকটি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে চাই।
প্রিয় ম্যাচ: ২০১৮ সালে আমার অভিষেক ম্যাচ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। যেটা ঠিক পরিকল্পনামাফিক ছিল। আমি সেদিন ভাল (২ বলে ১ রান) করতে পারিনি। বাড়ি ফেরার সময় একজন নির্বাচক আমাকে বলেছিলেন যে, পরের সিরিজে আমাকে নেয়া হবে না এবং ন্যাশনাল ক্যাম্পেও সুযোগ পাব না।
সেটা আমার জন্য অনেক কঠিন সময় ছিল। তাই আমি চিন্তা করলাম আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং শক্তভাবে ফিরে আসতে হবে। পরের বছর ইমার্জিং দলের হয়ে আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাই এবং একটা ম্যাচে ৪০+ রানের ইনিংস খেলি। সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এরপরই পুনরায় জাতীয় দলে সুযোগ পাই।
বিশেষজ্ঞের চোখে: (বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার জাহানারা আলমের মূল্যায়ন) বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ফিটনেস হ্যাপির। একজন উদীয়মান ক্রিকেটার যখন নিজের ফিটনেসের দিকে এত খেয়াল রাখে, তখন এটাই বোঝা যায় যে সে অনেকদূর এগিয়ে যেতে চায়। বাঁহাতি ব্যাটার হওয়ায় ওপেনার হিসেবে তার বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে সবসময় আরও ভাল করার একটা তাড়না রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এ ধারা বজায় রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক অবদান রাখতে পারবে সে।
ক্রিকইনফোর সম্ভাবনাময় ২০ নারী ক্রিকেটারের তালিকা
মুর্শিদা খাতুন (ওপেনার, বাংলাদেশ)শেফালি ভার্মা (ওপেনার, ভারত)সোফি মোলিনাক্স (অলরাউন্ডার, অস্ট্রেলিয়া)লরা উলভার্ট (ব্যাটার, দক্ষিণ আফ্রিকা)সোফি একলেস্টোন (স্পিনার, ইংল্যান্ড)ইসসি উঙ (পেসার, ইংল্যান্ড)শাবিকা গজনবী (অলরাউন্ডার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ)অ্যামেলিয়া কার (অলরাউন্ডার, নিউজিল্যান্ড)জেমাইমা রদ্রিগেজ (ব্যাটার, ভারত)টায়লা ভ্লামিঙ্ক (পেসার, অস্ট্রেলিয়া) সারাহ গ্লেন (লেগস্পিনার, ইংল্যান্ড)নাদিন ডি ক্লার্ক (অলরাউন্ডার, দক্ষিণ আফ্রিকা)রাধা যাদব (স্পিনার, ভারত)ওমাইমা সোহাইল (ব্যাটার, পাকিস্তান)জর্জিয়া ওয়ারহাম (লেগস্পিনার, অস্ট্রেলিয়া)শেনেতা গ্রিমন্ড (অলরাউন্ডার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ)ফোবি লিচফিল্ড (ব্যাটার, অস্ট্রেলিয়া)রিচা ঘোষ (ব্যাটার, ভারত)কাভিশা দিলহারি (অলরাউন্ডার, শ্রীলঙ্কা)অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (অলরাউন্ডার, অস্ট্রেলিয়া)
উল্লেখ্য, ক্রিকইনফোর টিমের সঙ্গে এ ২০ জনের তালিকা করতে নিজেদের মতামত দিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত নারী ক্রিকেটাররাও। তারা হলেন, সানা মির, সুজি বেটস, মেরিসা আদুইলেরা, শশীকলা সিরিবর্ধনে, লরা মার্শ, রিমা মালহোত্রা, লিয়া পুল্টন, দিনেশ দেবনারায়ণ, ট্রেভর গ্রিফিন।
এ তালিকা বাছাইয়ে একটাই শর্ত ছিল, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের মধ্যে বাছাইকৃত ক্রিকেটারদের বয়স অনূর্ধ্ব-২২ হতে হবে।
এসএএস/পিআর