দেশজুড়ে

জঙ্গি আস্তানায় মিলল বোমা তৈরির সরঞ্জাম-পিস্তল-চাপাতি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার শেরখালী উকিলপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের ১০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শুক্রবার দুপুরে (সাড়ে ১১টার দিকে) শেষ হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে র‌্যাবের একটি দল শাহজাদপুর উপজেলা সদরের উকিলপাড়ায় জঙ্গীদের আস্তানা ঘিরে রাখে। এ অভিযানে কিরণসহ জেএমবির চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

Advertisement

অন্যরা হলেন- পাবনা সাঁথিয়ার নাইমুল ইসলাম, দিনাজপুরের আতিয়ার রহমান ও সাতক্ষীরার আমিনুল ইসলাম শান্ত। তাদের আস্তানা থেকে দুটি পিস্তল, একটি চাপাতি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, গান পাউডার ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে।

জেএমবির আঞ্চলিক প্রধান (পাবনা-সিরাজগঞ্জ) কিরণ একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

অভিযান শেষে দুপুর ১২টায় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার শাহজাদপুরের ওই বাড়িটির পাশেই এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। তিনি জানান, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম এলাকায় এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাহমুদ, জুয়েল ও আশরাফুল নামের তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ২টার দিকে র‌্যাবের একটি দল শাহজাদপুর উপজেলা সদরের উকিলপাড়া একটি বাড়ি ঘিরে রাখে। অভিযানে শাহজহাদপুর থানা পুলিশ সহযোগিতা করে।

Advertisement

র‌্যাব-১২-এর মিডিয়া অফিসার (সহকারী পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মিরাজ জানান, চলতি নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে ছাত্র পরিচয়ে তারা শাহজাদপুরের শেরখালির (উকিলপাড়া) ফজলুল হক মাস্টারের এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে মিশে তারা নিজেরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) তাদের সাংগঠনিক মিটিং ছিল।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বিষয়টি জানার পরই বাড়িটি ঘিরে ফেলে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ শুক্রবার ভোররাতে অভিযান শুরু করলে র‌্যাবের অবস্থান টের পেয়ে জঙ্গিরা র‌্যাবকে উদ্দেশ্য করে ৪-৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।

হতাহতের ঘটনা এড়াতে র‌্যাব কৌশল পরিবর্তন করে বাড়িটি ঘিরে রাখে। পরবর্তীতে র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ারের নেতৃত্বে সকাল ১০টার দিকে নতুনভাবে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। র‌্যাবের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ওই আস্তানায় প্রবেশ করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। দীর্ঘসময় পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিরণ, নাইমুল, আতিয়ার এবং আমিনুল ইসলাম শান্তসহ চারজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। এরপরই র‌্যাব সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করে।

এর আগে সকাল নয়টার দিকে র‌্যাব সদর দফতর থেকে হেলিকপ্টারযোগে শাহজাদপুরে আসেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের র‌্যাবের সদর দফতরে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদেরকে শাহজাদপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে র‌্যাবের মিডিয়া অফিসার জানান।

Advertisement

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই বাড়িটি এখনো (শুক্রবার দুপুর আড়াইটা) ঘিরে রেখেছে র‌্যাব ও পুলিশ। বাড়িটির আশপাশে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বাড়িটির পাশ দিয়ে স্থানীয়দের চলাচলও করতে দেয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, শাহজাদপুরে এর আগে জঙ্গি ছিল না। হঠাৎ করে জঙ্গিদের অবস্থান তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তারা বলেন, ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী শাহজাদপুরে ঘাপটি মেরে ছিল তারা বুঝতেই পারেনি। তবে বড় ধরনের ক্ষতিসাধনের আগেই র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

আমিনুল ইসলাম/এসআর/জেআইএম