ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, দেশের বাজারে প্রচলিত জীবনরক্ষাকারী প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই সাধারণ ভাইরাল অসুখ-বিসুখেও (জ্বর, ঠান্ডা, কাশি) উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে ওষুধ কাজ করছে না।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে মেডিসিনস, টেকনোলজিস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সার্ভিসেসের (এমটিএপিস) সহায়তায় ‘দি ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অ্যাওয়ারনেস উইক’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অপব্যবহার, অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার এবং যথাযথভাবে ব্যবহার না করা দ্রুত রোগব্যাধি সারিয়ে তুলতে এক সময়ের আশীর্বাদস্বরূপ আবির্ভূত হওয়া অ্যান্টিবায়োটিক এখন কার্যকারিতা হারিয়ে অভিশাপে রূপ নিচ্ছে। শুধু মানুষের জন্য উৎপাদিত ওষুধেই নয়, পোলট্রি ও মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন প্রাণীর রোগ সারাতেও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছে, যা পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, শুধু আইন করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তথা এর অপব্যবহার রোধ করা যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে রোগব্যাধি সারাতে ওষুধ পাওয়া যাবে না, মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।
Advertisement
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধে গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ওষুধ উৎপাদনে জড়িত বিভিন্ন কোম্পানি, চিকিৎসক, প্যারামেডিকস ও ফার্মাসিস্টদেরও সচেতন হতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
আলোচনা সভায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরেরে উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
তিনি বলেন, রোগব্যাধি নির্ণয়ের ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রধানত এক্সেস, ওয়াচ ও রিজার্ভ- এ তিনটি গ্রুপের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন ধাপে সেবনের কথা। কিন্তু বাস্তবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরাসরি উচ্চমাত্রার ওষুধ সেবন করছেন রোগী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমানের গবেষণা তথ্য তুলে ধরে সালাউদ্দিন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে ৪৪ শতাংশ এক্সেস গ্রুপের এবং ৫৪ শতাংশ ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ নিয়মানুসারে এক্সেস গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকই বেশি ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল।
Advertisement
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামানসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমইউ/এসএস/এমকেএইচ