কাজী আসমা আজমেরী প্রথম বাংলাদেশি, যিনি বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১১৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০০৯ সালে বন্ধুর মায়ের বিদ্রুপ ‘মেয়েরা বিশ্বভ্রমণ করতে পারে না’ শুনে তার মনে একধরনের জেদ জন্ম নেয়। সেই থেকে তিনি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন নিজের গহনা বিক্রি করে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
Advertisement
২০১০ সালে প্রথমে ভিয়েতনাম ইমিগ্রেশন জেলে থাকতে হয় ২৩ ঘণ্টা। সেদিন রিটার্ন টিকিট না থাকা এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট হওয়ার কারণে লাঞ্ছনা সইতে হয়। একই বছর সাইপ্রাসে তাকে ২৭ ঘণ্টা সেখানকার ইমিগ্রেশন জেলে শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্টের কারণে আটকে রাখা হয়। তখন তার মনে দারুণ ক্ষোভ জন্ম নেয়। সেই ক্ষোভ থেকে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চান, বাংলাদেশি পাসপোর্টেও বিশ্বভ্রমণ করা সম্ভব।
এজন্য তিনি ২০১০ সাল থেকে ভুয়া স্টুডেন্ট ও ট্যুরিস্টদের নিরুৎসাহিত করেন। ২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট রেখে দেন। ২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিলে ৫০টি দেশ ভ্রমণ উদযাপনের সময় ভয়েস অব আমেরিকার চোখে পড়েন, তবে তিনি মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন।
তারপরও বিদেশি পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে টিভি, রেডিও সবখানেই বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। বিবিসি বাংলা, চায়না রেডিও, জার্মানির ব্রায়ান২, সুইডেনের লোকাল রেডিও, উজবেকিস্তানের টিভি, রাশিয়া নিউজ পেপার, তুর্কমেনিস্তানের ন্যাশনাল টিভি, নিউজ পেপারে তার ১০০টি দেশ ভ্রমণের আর্টিকেল ছাপা হয়।
Advertisement
এছাড়া ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দুও তাকে নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে। তিনি ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বভ্রমণের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের ভ্রমণের গল্প বলে অনুপ্রাণিত করেন। তাদের ভেতরে স্বপ্ন জাগিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে অনুপ্রাণিত করেন। সেসব আর্টিকেলও প্রকাশ হয়।
চলতি বছর ‘মুজিববর্ষে’ ১ লাখ শিক্ষার্থীকে ভ্রমণের গল্পের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করবেন। পাশাপাশি কাজ করছেন ৭-১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ও এক্সট্রা কারিকুলামে উৎসাহিত করার জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের দিনমজুর, রিকশা চালক, গৃহকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের অধিকার নিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সন্ধানী ডোনার ক্লাব, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সাথে জড়িত আছেন।
বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের অ্যাম্বাসেডর ও ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সোসাইটির ‘কান্ট্রি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করছেন। কর্মজীবনে রিয়েল এস্টেট, স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেডক্রসের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি করেছেন।
তিনি শুধু নিজেই ভ্রমণ করতে চান না, বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্টধারীদের ভ্রমণের পথ সুগম করার চেষ্টা করছেন। সেসব অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থিত হবেন জাগো নিউজের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘জাগো তারকা’য়। জাগো নিউজের সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশীদের উপস্থাপনায় জানাবেন তার সফলতা ও প্রতিবন্ধকতার গল্প। অনুষ্ঠানটি শিগগিরই প্রচার হবে জাগো নিউজের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
Advertisement
এসইউ/পিআর