জাতীয়

ফের ওমরাহ চালুর তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত নন কেউই!

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত ৪ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে ওমরাহ হজ কার্যক্রম শুরু করে সৌদি সরকার। প্রথম পর্যায়ে শুধু অবস্থানরতদের জন্য ও দ্বিতীয় দফায় বিশ্বের স্বল্পসংখ্যক দেশ থেকে ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক মুসল্লিদের অনুমতি দেয় সৌদি আরব।

Advertisement

সে তালিকায় এখনও নাম নেই বাংলাদেশের। এদিকে ওমরাহ পালনের জন্য মুখিয়ে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ। অনেকেই নিয়ে রাখছেন মানসিক প্রস্তুতি। এসব মুসল্লির প্রশ্ন, ‘কবে নাগাদ বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ হজযাত্রী পাঠানো শুরু হবে? জনপ্রতি ব্যয়ই বা কত হতে পারে?’

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, কবে নাগাদ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আবার ওমরাহ হজে যেতে পারবেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই।

জাগো নিউজের জিজ্ঞাসায় হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব), ওমরাহ হজ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

Advertisement

সোমবার (১৬ নভেম্বর) শর্তসাপেক্ষে ১৬৭টি এজেন্সিকে ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের অনুমতি পেতে এজেন্সিগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করছে।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘কবে নাগাদ বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ হজে বাংলাদেশিরা যেতে পারবেন, তা এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। দুদিন আগে ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৬৭টি এজেন্সিকে ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে। এমতাবস্থায় এজেন্সিগুলো নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ধর্ম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৌদি দূতাবাস, সৌদি আরবে এজেন্সির পক্ষে যারা কাজ করবে তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান) হালনাগাদ করবে এবং সেই ডকুমেন্টগুলো ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সত্যায়িত করে সৌদি আরবে পাঠাবে।

‘এরপর সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দফতর থেকে ডকুমেন্ট পরীক্ষা শেষে ভিসার জন্য বাংলাদেশি এজেন্সিকে ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দেবে। এই ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড না পাওয়া পর্যন্ত কবে নাগাদ ওমরাহ শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।’

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের আগে বাংলাদেশ থেকে কেউ ওমরাহ করতে যেতে পারবেন না বলে ধারণা শাহাদাত হোসাইনের।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এজেন্সি মালিকও জাগো নিউজকে একই তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাসে এজেন্সির বিভিন্ন ডকুমেন্ট সত্যায়নকারী কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সত্যায়নের কাজে বিলম্ব হচ্ছে।

ওমরাহ চালু হলে জনপ্রতি খরচ কেমন পড়বে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক হজ এজেন্সির মালিক বলেন, এখনও নির্দিষ্ট করে জনপ্রতি খরচ পড়বে বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাঠানোর পর সৌদি সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর তা বলা যাবে। অনুমান করে বলা যায় জনপ্রতি খরচ কমপক্ষে এক লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি লাগবে।

কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন শর্ত দেয়া হয়েছে। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে সব বয়সের মানুষ এখন ওমরাহ পালন করতে যেতে পারবেন না। এবার শুধু ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীরাই ওমরাহ পালনে যেতে পারবেন। একসঙ্গে ৫০ জনের গ্রুপ করে যেতে হবে। সৌদি আরবে গিয়েই তাদের তিনদিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ওমরাহ পালনে অনুমতি দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ওমরাহর জন্য মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। উল্লেখিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় মুসল্লিরা কাবা শরিফের মূল চত্বরে (বায়তুল্লাহ) অবস্থান করতে পারবেন না। তাছাড়া হোটেলের একটি কক্ষে দুজনের বেশি যাত্রী রাখা যাবে না। ওমরাহ প্যাকেজের আওতায় খাবারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এয়ারলাইন্সের ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন শর্তের কারণে খরচ বাড়বে বলে তারা মনে করেন।

২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১ কোটি ৯০ লাখ হজযাত্রী ওমরাহ পালন করেছেন। এবার করোনার কারণে কয়েক মাস ওমরাহ বন্ধ ছিল। গত ৪ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে ওমরাহ পালনের অনুমতি দেয়া হলেও রীতি অনুযায়ী কাবা স্পর্শ করার অনুমতি দেয়া হয়নি।

জানা গেছে, প্রতি বছর হজ ও ওমরাহ'র মাধ্যমে দেশটির প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। কিন্তু করোনার কারণে তাদের আয় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এ বছর প্রথমবারের মতো সীমিত আকারে হজের প্রস্তুতি নেয় দেশটি। সীমিত আকারে হজ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সৌদি আরবের নাগরিক ও দেশটিতে বসবাসরত বাসিন্দা ছাড়া কেউ হজ পালনের অনুমতি পাননি।

এমইউ/এসএস/এমকেএইচ