ধর্ম

অন্যের ঘরে প্রবেশে ইসলামি শিক্ষা

ইসলাম এক শান্তি ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। যেখানে জীবন ও জগতের খুঁটিনাটি থেকে বড় বড় সব বিষয়ের যাবতীয় নিয়মাবলী এবং এর সুষ্ঠু সমাধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মানব জাতির জন্য এমন কোনো আদেশ-নিষেধ ইসলামে দেয়া হয়নি যা তার পক্ষে পালন করা অসম্ভব। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাদের সাধ্যের বাইরে কোনো নির্দেশ দেননি।

Advertisement

তার আদেশাবলীর মাঝে একটি হচ্ছে- ‘অন্যের ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করা।’ অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না; যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং ঘরের অধিবাসীকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।

যদি তোমরা ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদের বলা হয়- ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্যে অনেক পবিত্রতা আছে এবং তোমরা যা কর, আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।

যে ঘরে কেউ বাস করে না, যাতে তোমাদের সামগ্রী আছে; এমন ঘরে প্রবেশ করাতে তোমাদের কোনো পাপ নেই এবং আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা গোপন কর।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৭-২৯)

Advertisement

অন্যের ঘরে প্রবেশের ব্যাপারে কুরআনুল কারিমের শিক্ষা কতই না চমৎকার! কোনো ব্যক্তির বাড়িতে বা অফিসে তার সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে নিজের পরিচয় জানানো বা পরিচয়পত্র উপস্থাপনই ইসলামের সুমহান শিক্ষা। এতে করে জানা যায়, সেই ব্যক্তি উক্ত সাক্ষাৎপ্রার্থীকে আদৌ সাক্ষাৎদানে রাজি আছে কিনা।

অথচ আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন, যারা কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তার অফিসে বা বাসায় অনুমতি না নিয়েই দেখা করতে চলে যাই। আবার কারো ঘরে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে চাই। এমনটি করা ইসলামি শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। হাদিসে এসেছে-

- হজরত বানু আমের নামক গোত্রের এক ব্যক্তি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘরের বাইরে থেকে বলল- আমি কি ঢুকে পড়ব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, লোকটির অনুমতি চাওয়ার নিয়ম জানে না। বাইরে গিয়ে তাকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। সে প্রথমে সালাম দেবে অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলবে, তারপর বলবে- ‘আমি কি প্রবেশ করতে পারি? (আবু দাউদ)

- হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে প্রথমে সালাম না করে, তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিয়ো না।

Advertisement

- হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অনুমতি চাইতে হবে তিনবার, যদি অনুমতি দেয় তবে প্রবেশ করবে নতুবা ফিরে যাবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

- একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত সাদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাড়িতে গেলেন এবং আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে দুইবার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু ভেতর থেকে জবাব এলো না। তৃতীয়বার জবাব না পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে যেতে লাগলেন। হযরত সাদ ভেতর থেকে দৌড়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার আওয়াজ শুনছিলাম, কিন্তু আমার মন চাচ্ছিল আপনার মুবারক কণ্ঠ থেকে আমার জন্য যতবার সালাম ও রহমতের দোয়া বের হয় ততই ভালো, তাই আমি খুব নিচুস্বরে জবাব দিচ্ছিলাম।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

উত্তম জীবন ব্যবস্থা ও বিধান হল ইসলাম। জীবন চলার পথে এমন কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে না; যার উল্লেখ নেই ইসলামে। আর ইসলামের শিক্ষা যদি আমরা মেনে চলি তাহলে অবশ্যই সমাজ ও দেশে বিরাজ করবে শান্তি। ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী অন্যের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। হাদিসে আরও এসেছে-

- হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো নারীর কাছে যেতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিষেধ করেছেন।’ (তিরমিজি)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আজ থেকে যেন কেউ স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো নারীর কাছে না যায়, যতক্ষণ তার কাছে একজন অথবা দুইজন লোক না থাকে।’ (মুসলিম)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ এবং কেয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য বৈধ নয় যে, সে তার স্বামীর ঘরে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষকে প্রবেশ করতে দেবে।’ (বায়হাকি)

সুতরাং আমরা যদি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার ওপর আমল করি তাহলে যেমন থাকবে না পারিবারিক অশান্তি আবার আমরা সহজেই মুক্তি পেতে পারি। তাই আসুন! ইসলামের সুমহান শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের জীবন সাজাই। হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে পরিবার ও সমাজকে শান্তিময় করি।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে কুরআন ও সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস