ধর্ম

দানের ১৭টি সহজ উপায়; সাধ্যের মধ্যেই

দান-সাদকা উত্তম ইবাদত। দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের মুক্তি দান-সাদকার বিকল্প নেই। হায়াত লাভ গোনাহ মাফের অন্যতম ইবাদত এটি। শান্তি ও কল্যাণকর যে কোনো কাজই হতে পারে সৃষ্টির জন্য অনন্য দান। চাইলেই যে কেউ সাধ্যের মধ্যে ১৭টি সহজ কাজের মাধ্যমে দানের সাওয়াব পেতে পারেন। উপায়গুলো হলো-

Advertisement

> নিয়মিত সাদকার সাওয়াব পেতে চান? একটি জায়নামাজ কিনে মসজিদে রেখে দিন। মানুষ যতদিন এতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহর ইচ্ছায়, ততদিন আপনি সাওয়াব পেতে থাকবেন।

> মসজিদে একটি কুরআন মাজিদের পাণ্ডুলিপি রেখে দিন। যখনই মসজিদে যাবেন, নিজে কুরআন মাজিদ পড়বেন; নিজে না পড়লেও যে কেউ তা পড়বে; তাতেও মিলবে সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব।

> নিয়মিত সাওয়াব পেতে নিজেদের অব্যবহৃত পোশাক গরিব-অসহায়কে দিন।

Advertisement

> দানের সাওয়াব পেতে অনুতপ্ত হোন। অনুতপ্ত হতে নিজের ভুলে হিসাব রাখুন। নিজ ঘরে একটি মাটির ব্যাংক বা বক্স রাখুন। যখনই কোনো অন্যায় বা ভুল হবে তখনই সাধ্য অনুযায়ী একটি পয়সা বা টাকা রাখুন। এভাবে একমাস যাবত টাকা জমা করুন। মাস শেষে তা গণনা করুন। গরিব দুঃখীর মাঝে সে অর্থ বিলিয়ে দিন।

এত এক দিকে নিজের গোনাহের হিসাব করে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হোন। আর গোনাহের হিসাব অনুযায়ী গচ্ছিত টাকা দানের মাধ্যমে ভুলের পরিবর্তে ক্ষমা লাভের উত্তম পন্থাটি গ্রহণ করুন।

> আমলের বিনিময়ে সাদকার সাওয়াব লাভের চেষ্টা করা যেতে পারে। তা এমন- সাধ্য অনুযায়ী কম-বেশি বাড়ির বাইরে রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে মানুষের দৃষ্টির মধ্যে পড়ে এমন স্থানে কাগজে বা কাঠের ওপর দোয়া, তাসবিহ ও জিকির লিখে টানিয়ে দিন। যারাই এ দোয়া, তাসবিহ ও জিকির পড়বেন, তাদের পড়ার সাওয়াবও আমলনামায় যোগ হেব।

> হাত খরচের টাকা থেকে সাধ্য অনুযায়ী ইয়াতিমকে দান করুন।

Advertisement

> বাড়ির পাশে রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট নির্মাণ কাজের শ্রমিককে ঠাণ্ডা পানীয় বা সাধ্য অনুযায়ী খাবার দিয়ে সহায়তা করুন। এ পানীয় ও খাবার দানে নিয়মিত সাদকার সাওয়াব মিলবে।

> কোনো পাত্রের পানি পান করেছেন কিংবা কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় পানি ব্যবহার করেছেন; এতে কিছু পানি রয়েগেছে বা ব্যবহৃত পানি জমা রয়েছে। তা অযথা ফেলে না দিয়ে কোনো গাছ কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করুন। আবার এ পানি যদি পরিবেশ বা কোনো প্রাণীর জন্য ক্ষতির কারণ হয় তবে তা নিরাপদ স্থানে ফেলে দিন। তাতেও মিলবে সাদকা বা দানের সাওয়াব।> মানুষের দুর্দিনে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করার মাধ্যমেও পাওয়া যায় সাদকার সাওয়াব। অর্থ সাহায্য করতে না পারলে পরামর্শ ও সময় ব্যয় করে পাশে দাড়ালেও মিলবে সাদকার সাওয়াব।

> ভালো কাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ, উৎসাহ ও সহনুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় সাদকার সাওয়াব। যে সাওয়াব লাভে অর্থ খরচের প্রয়োজন নেই।

> অসুস্থ ব্যক্তির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখায়ও মিলবে সাদকার সাওয়াব। অসুস্থ কিংবা বিপর্যস্ত ব্যক্তি সুস্থ করে তুলতে তার সঙ্গে মৃদু হাসি, উত্তম আচরণ ও ভাব-বিনিময়েও রয়েছে সাদকার সাওয়াব।

> অন্যকে ক্ষমা করার মধ্যেও রয়েছে সাদকার সাওয়াব। তাই করো প্রতি মনে কষ্ট নিয়ে বা করো অন্যায় আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে ঘুমাতে না যাওয়া। বরং ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্যায় বা জুলুমকারীকে ক্ষমা করার মাধ্যমেও পাওয়া সাদকা বা দানের সাওয়াব।

> দ্বীন ও ঈমানের আলোকিত শিক্ষায় সহযোগী হোন। ছোট কিংবা বড় একটি শব্দ বা আমল হলেও শিক্ষা দিন। সাধ্য অনুযায়ী দ্বীন শেখানের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করুন। দ্বীন শেখার কাজে সময় দিলেও মিলবে নিয়মিত সাদকার সাওয়াব।দ্বীন ও ঈমানের এ শিক্ষা বা আমল যতদিন চলতে থাকবে তত ওই ব্যক্তি পেতে থাকবে সাওয়াব আর সাওয়াব। মৃত্যুর পরেও বন্ধ হবে এ সাওয়াব। কেননা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলবে দ্বীন শিক্ষার এ আমল।

> বাড়ির বা ঘরের আঙিনায়, জানালার পাশে কিংবা ঘরের চালে একাধিক পাত্রে কিছু পানি, ভালো কিংবা অব্যবহৃত খাদ্য বা দানাদার খাবার রেখে দিন। এটিকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করুন। যাতে ভ্রম্যমান পাখি কিংবা গৃহপালিত পশু পাখি তা খেতে পারে। এ খাদ্য সেবায়ও রয়েছে সাদকার সাওয়াব।

> সামর্থ্য অনুযায়ী মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট নির্মাণ, টিউবয়েল, কবরস্থান স্থাপন, ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগানো, পথচারিদের পানি পানের ব্যবস্থাসহ ইত্যাদি জনকল্যাণমূল কাজে অংশগ্রহণ করা। এতেও মিলবে সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব। যতদিন এ সেবা চলমান থাকবে ততদিন মিলবে সাওয়াব।

> নিজ পরিবারের সন্তান কিংবা বংশের লোকদের উত্তম আচরণ শিক্ষা দিন। ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। নীতি নৈতিকতা শিক্ষা দিন। সঠিক মানুষ হতে সাহায্য করুন। তা হবে ওই ব্যক্তির জন্য সাদকায়ে জারিয়া।

> উল্লেখিত কাজগুলোসহ যেসব কাজে মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়; তা সক্ষম মানুষের কাছে তুলে ধরুন। অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন। যারা কোনো ব্যক্তির উৎসাহ উদ্দীপনা নিজেদের ভালো কাজে নিয়োজিত করবে; জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করবে; তাও হবে সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সাধ্য অনুযায়ী সামর্থ্যের মধ্যে উল্লেখিত কাজগুলো নিয়মিত করে যাওয়া। অর্থ খরচ করা ছাড়াও সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব লাভের চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। সাদকা দানের সাওয়াব ও ফজিলত লাভে অর্থই সব নয়; বরং নিজের কল্যাণ মূলক অংশ গ্রহণও হতে পারে সাদকায়ে জারিয়ার আমলে সম্পৃক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাধ্য অনুযায়ী, অর্থ দান, সময়, পরার্শ ও সেবার মাধ্যমে সাদকা বা দানের সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। সাদকায়ে জারিয়ার ভাগিদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর