টানা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ শেষে বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখল ফিরে পেয়েছে আজারবাইজান। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তি অনুসারে রোববারই কিছু এলাকা ছেড়ে দেয়ার কথা আর্মেনীয়দের। সেই শর্ত মানতে শনিবারই আর্মেনিয়া চলে গেছেন অনেকে। তবে যাওয়ার সময় দীর্ঘদিন বসবাস করা ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন তারা।
Advertisement
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের কালবাজার শহর এবং এর আশপাশের এলাকা রোববার আজারি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার কথা আর্মেনিয়ার। গত ৯ নভেম্বর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এবং আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোশ পাশিনিয়ানের সই করা চুক্তিতে এমনটাই শর্ত রাখা হয়েছে।
তবে শান্তিচুক্তির পরপরই আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানের পথে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। কিছু লোক নিরাপত্তার বেড়া টপকে সরকারি ভবনে ঢুকে যান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে পাশিনিয়ান বলেছিলেন, আরও ভূমি হারানো ঠেকাতে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তিতে সই করা ছাড়া তার সামনে আর কোনও উপায় ছিল না।
Advertisement
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে কালবাজার সীমান্তবর্তী শারেতার গ্রামে অন্তত ছয়টি বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
কালবাজারের পাশাপাশি আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও দু’টি অঞ্চলের শাসনভার আজারবাইজানের হাতে তুলে দেয়ার কথা আর্মেনিয়ার।
গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে নাগোরনো-কারাবাখের দখল নিয়ে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সেনাবাহিনীর মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশ দু’টির মধ্যে এই বিবাদ চলছিল।
আর্মেনিয়া জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহের লড়াইয়ে তাদের ২ হাজার ৩১৭ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। তবে আজারবাইজানের পক্ষ থেকে হতাহতের কোনও তথ্য জানানো হয়নি।
Advertisement
চলতি সপ্তাহের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশ দু’টির মধ্যে সহিংসতায় দুই পক্ষ মিলিয়ে চার হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি।
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটিকে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের বলে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এতদিন তার নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্মেনীয় নৃ-গোষ্ঠীর হাতে। নব্বইয়ের দশকের যুদ্ধের পর অঞ্চলটির দখল নেয় আর্মেনিয়া।
নাগোরনো-কারাবাখ নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করলেও তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। ফলে আইনগতভাবে সেটি আজারবাইজানের অধীনেই থেকে যায়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎই ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় আর্মেনীয়-আজারি সেনাদের মধ্যে। একাধিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মাসব্যাপী চলে এ লড়াই। অবশেষে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় গত সপ্তাহে আর্মেনিয়া সরকার নাগোরনো-কারাবাখের দখল ছেড়ে দিতে রাজি হলে একপ্রকার বিজয় নিশ্চিত হয় আজারবাইজানের।
কেএএ/জেআইএম