মতামত

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও কেন উদাসীন?

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও কেন উদাসীন?

অনেক দিন হয়ে এলেও প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামছে না। থেমে নেই মৃত্যুও। শনাক্তের সংখ্যাও অনেক। তবুও বাড়ছে না সচেতনতা। ছোঁয়াচে এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। কবে ভ্যাকসিন আসবে তারও নেই কোনো নিশ্চয়তা। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়। মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, উপসর্গ দেখা দিলে হোমকোয়ারেন্টিনে থাকার মধ্য দিয়ে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাঁচতে হলে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

Advertisement

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ জন ও নারী ৪ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ হাজার ১৭৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৫৩১ জন। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪ লাখ ৩০ হাজার ৪৯৬ জনে। গতকাল শনিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৬২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৯ জন।

বাস্তবতা হচ্ছে মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। অথচ একজনের উদাসনীতা অন্যের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবা গ্রহীতারা ছাড়াও সব জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা করে ইতোপূর্বে পরিপত্র জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগত সেবা গ্রহীতাদের আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। শপিংমল, বিপণি-বিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

Advertisement

এছাড়া হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরিধান ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে না। স্থানীয় প্রশাসন, ও হাট-বাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে। গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে আরোহণের পূর্বে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সব পথচারীকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করবেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতিকে নিশ্চিত করতে হবে।

সব প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান নিশ্চিত করবে। বাড়িতে করোনাভাইরাসের উপসর্গসহ কোনো রোগী থাকলে পরিবারের সুস্থ সদস্যদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

কথায় আছে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।’ করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য। তাই বাঁচতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কেবল আইন মানার জন্য নয়, নিজের জীবনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্যও।

Advertisement

এইচআর/জেআইএম