গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক লাখ টাকায় শারীরিক বা মোটরজনিত রোগ সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Advertisement
তিনি বলেছেন, ‘পুষ্টিহীনতা ও বাচ্চা হওয়ার সময় পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়া- এ দুটি সমস্যার কারণে এ রোগটি হতে পারে। তাই আমাদের প্রথম কাজ হবে এটি প্রতিরোধ করা। যদি রোগটি হয়ে যায়, তাহলে সার্জিক্যাল অপারেশন করতে হয়। সার্জিক্যাল অপারেশনে রোগ ভালো হয়। চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই রোগের অপারেশনের জন্য তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে থাকে। আমরা কিন্তু এক লাখ টাকায় এ চিকিৎসা দিচ্ছি।’
শনিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সেরিব্রাল পালসির সার্জিক্যাল চিকিৎসা সংক্রান্ত সেমিনারে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় আরও কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোস্তফা মাহবুব, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার নাজমুল হক এবং শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মেজবা উদ্দিন আহমেদ।
Advertisement
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘ফেসিয়াল পালসির অর্থ হলো ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস (মুখ বেঁকে যায়, চোখ খোলা থাকে)। সেরিব্রাল পালসিও ওইরকম একটা রোগ। যেখানে ব্রেইনের কিছু কিছু অংশ নষ্ট হতে থাকে বা নষ্ট হয়। সোজা কথায় সেরিব্রাল পালসি মানে আমরা বলতে পারি, আংশিক ব্রেইন প্যারালাইসিস। সাধারণত জন্মের পর পর নবজাতক ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে না পারার জন্য শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এতেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রেইন। আমাদের দেশে এক হাজার বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে এর মধ্যে ৩.৫ জন সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ১.৫ গুণ বেশি। এসব রোগীদের অধিকাংশ খিঁচুনি হয়। যখন খিচুনি হয় তখন বাচ্চা নিঃশ্বাস নিতে পারে না। এভাবে বারবার খিঁচুনি হলে ব্রেইন অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ব্রেইন বারবার ক্ষতি হতে পারে।’
বাংলাদেশে প্রথম গত ১ নভেম্বর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক রোগীর মাথার খুলি কেটে এ রোগের সফল অস্ত্রপচার সম্পন্ন করেন অধ্যাপক ডা. ফরিদুল ইসলাম।
সেমিনারে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত উন্নত বিশ্বে অনেক স্পেশালিস্ট নিয়ে যেমন- নিউরোজসার্জন, নিউরো মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসন, সাইকিয়াট্রিক, অর্থপেডিক সার্জন সবাই মিলে একটা টিম গঠন করে একটা চিকিৎসা দেয়। যেসব মেডিসিন ব্যবহার করা হয়, তা হলো অ্যান্ট্রিইনফ্লেমেটরি, খিচুনি বন্ধ হওয়ার ওষুধ, বেঞ্জোডাইয়াজিপিন, বেকক্লোফেন, ডেনট্রোলিন, গাবাপেনটিন, কাবিডোপা-লিবোডোপা ও বেঞ্জট্রপিন। ইনজেকটেবল ফরমে দেয়া হয় বটোলিনিয়াম টক্সিন এবং সঙ্গে ফিজিউ থেরাপি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্জারি যেটা করা হয়, তা হলো বেক্লোফেন পাম্প, টেনডোম রিলিজ, হিপ রোটেশন সার্জারি, স্পাইনাল ফিউশন, স্ট্রেবিসমাস রিপিয়ার, ডিপ ব্রেইন এসটিমুলেশন। আমরা ব্রেইনের ভল্ট কেটে, ব্রেইনের পর্দাসহ প্লাস্টিক সার্জারি করে প্রতিস্থাপিত করলাম। এতে রোগীর অন্য কোনো চিকিৎসার খুব একটা প্রয়োজন পড়ছে না। তবে ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য সাপোর্ট রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে দেয়। আমাদের এই রোগী টাকা গুনতে পারত না, টাকা চিনত না, ছোটবেলা থেকে ১ ২ ৩ ৪ গুনতে পারলেও অক্ষর চিনত না। বাবার মার পাশ ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারতে না। খুব ভয় পাইতে, এখন তার এসব সমস্যা নেই।’
Advertisement
পিডি/এফআর/এমকেএইচ