উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শশ্মান বরিশালে দীপাবলি উৎসব ঘিরে অন্য বছরের মতো এবারও মহাশ্মশানে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যা হতে না হতেই নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশান এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ভিড়ের কারণে একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনকে ঠেলাঠেলি করে প্রবেশ করতে হয়েছে মহাশ্মশানে।
Advertisement
এ সময় অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। ফলে সেখানে মানা হয়নি কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কালি পূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরনের খাবার।
সবকিছু করা হয় তিথি থাকা অবস্থায়। এছাড়া সমাধীর পাশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা।
Advertisement
শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকে লগ্ন (তিথি) শুরু হয়ে শেষ হয়েছে শনিবার সকাল ৭টায়। এ কারণে সংক্রমণের আশঙ্কা উপেক্ষা করেই শুক্রবার বিকেল থেকে মহাশ্মশানে মানুষের ঢল নামে।
সন্ধ্যা হতে না হতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। সন্ধ্যার পর মহাশ্মশানের ৫০ হাজারের বেশি সমাধি মন্দির মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। সমাধীর পাশে পাশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রয়াতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা।
পরলোকগতদের আত্মার শান্তি কামনা করে চলে প্রার্থনা। অসংখ্য মোমের আলোয় পুরো মহাশ্মশান এলাকায় অন্য রকম আবহ সৃষ্টি হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এশিয়া মহাদেশ তথা পৃথিবীর বৃহত্তম আয়োজন এটি। ভারতে এটি দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে শশ্মান দীপালি উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
Advertisement
নতুন পুরনো মিলিয়ে মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮০০ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন এই দেশে নেই। সেইসব মঠগুলো হলুদ রং করা হয়েছে। স্বজন না থাকা মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
শশ্মান দীপাবলি উৎসব নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তা বিবেচনায় মহাশ্মশানের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয় ২০টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা এবং নিয়োগ করা হয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুন্ডু জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সুরক্ষাবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার বাহারি আলোকসজ্জা করা হয়নি। লোক সমাগম এড়াতে আয়োজন করা হয়নি মেলার। স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল। সামাজিক দূরত্ব মানার জন্যও নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সাইফ আমীন/এফএ/পিআর