বিনোদন

অভিনেতা রাজীবকে হারানোর ১৬ বছর আজ

তিনি ছিলেন একজন প্যাকেজ অভিনেতা। সিনেমায় তার উপস্থিতি মানেই দর্শকের বাড়তি আগ্রহ। কখনো কখনো নায়ক-নায়িকাকে ছাপিয়ে তিনি ভিলেন চরিত্র নিয়েই হয়ে উঠতেন সিনেমার মূল আকর্ষণ।

Advertisement

ভয়ংকর ভিলেন, কমেডিয়ান, বড় ভাই, স্নেহশীল বাবা; তাকে পাওয়া গেছে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে সফল অভিনেতা হিসেবে। ভরাট কণ্ঠ ছিল তার শক্তি। সাবলীল অভিনয় তার অহংকার। তিনি অভিনেতা রাজীব।

ঢাকাই সিনেমায় বাঘের মতোই দাপট ছিল তার। সে যেমন পর্দায়, তেমনি বাস্তবে৷ আজ এই কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী। ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

রাজীব নেই ১৬ বছর হয়ে গেল। কিন্তু আজও দর্শকের হৃদয়ে তিনি উজ্জ্বল। তাকে মিস করেন সিনেমায়। নতুন প্রজন্মের কাছেও রাজীব এক আক্ষেপের নাম। টিভি কিংবা ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে রাজীব অভিনীত সিনেমা দেখে তারা অনুভব করেন শক্তিমান এক অভিনেতার শূন্যতা।

Advertisement

পর্দায় তার নাম রাজীব। পারিবারিক নাম ওয়াসিমুল বারী রাজীব। ভাষা আনদোলনের বছর ১৯৫২ সালে ১ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পটুয়াখালী জেলার দুমকিতে। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর।

পেশাজীবন শুরু করেন তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে। শখ ছিল অভিনয়ে। জড়িয়েছিলেন মঞ্চ নাটকে। চমৎকার উচ্চারণ ও ভরাট কণ্ঠের প্র্যাকটিস তিনি মঞ্চেই করেছেন। মঞ্চ থেকে কাজ করেছেন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে।

তবে রাজীবের ভাগ্য নির্ধারিত ছিলো সিনেমায়। তিনি ঢালিউডে নায়ক হয়ে পা রাখেন ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ ছবিতে। নায়ক হয়ে তার খ্যাতি আসে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘খোকনসোনা’ ছবিতে। ‘দাবি’ নামের আরও একটি ছবিতে নায়ক ছিলেন।

তবে সিনেমায় রাজীবের উত্থান বা সাফল্যের গল্পটা ভিলেন হিসেবে। খলনায়ক হিসেবে রাজীবের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো– দাঙ্গা, চাঁদাবাজ, ভাত দে, ত্রাস, লুটতরাজ, জবরদখল, মীরজাফর, মিথ্যার রাজা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, স্বপ্নের পৃথিবী, বিক্ষোভ, বিদ্রোহী সন্তান ইত্যাদি।

Advertisement

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে। সেগুলো হলো-হীরামতি (১৯৮৮), দাঙ্গা (১৯৯১), বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০), সাহসী মানুষ চাই (২০০৩)। এছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছেন।

তবে অভিনেতা রাজীবের ক্যারিয়ারের দারুণ প্রাপ্তি বলা যায় বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা। তিনি ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও উচ্চপদস্থ এই পদে আসীন হওয়া প্রথম ব্যক্তি।

অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাতেও নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ফ্রেন্ডস মুভিজ।

ব্যক্তিজীবনে তিন পুত্রের জনক ছিলেন রাজীব। তার মধ্যে দুই ছেলে ১৯৯৬ সালে বন্যা দুর্গত মানুষদের দেখতে যাবার পথে পানিতে ডুবে একসঙ্গে মারা যায়। দীপ্ত নামে আরেক পুত্র এখন দেশেই আছেন। বিয়ে করেছেন। কাজ করছেন একটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির কর্মকর্তা হিসেবে।

এলএ/এসআর