তাপস হালদার
Advertisement
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ একটি অস্থির সময় পার করছে। সারাবিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকলেও এখনও আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলিয়ে একটি সুন্দর সময় যখন চলছে, মানুষের জীবন যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ঠিক এমন একটি সময় আবার বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন-সন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে।
গত ১২ নভেম্বর দুপুর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজধানী ব্যস্ততম ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাসে আগুন দেয়া হয়। ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন ছিল। সেখানে যুবদলের এক নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই প্রার্থীর মধ্যে আগেই কয়েকবার হামলা-পাল্টা হামলা ঘটেছে। এমনকি বিএনপি মহাসচিবের বাসায় হামলা ভাঙচুর করা হয়েছিল। বিএনপির প্রার্থীর নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে এবং জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করতে পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে।
বিএনপি উপনির্বাচনগুলোতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শুধু নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতেই অংশগ্রহণ করে থাকে। ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে নেমেই ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ জন্য এখন জনগণ তো নয়ই কর্মী-সমর্থকদেরও তাদের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই। নইলে বিএনপির মতো একটি দলের প্রার্থী একটি কেন্দ্রে এক ভোট পাবে না এমনটি হতে পারে না।
Advertisement
বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেযার সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীজুড়ে বাসে আগুন দেয়া শুরু হয়ে গেল। এটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হামলা। বিএনপি-জামায়াত চক্র কি কখনো মানুষের অনুভূতি বুঝবে না? এখন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে এটাই তাদের সহ্য হচ্ছে না। শুধু সরকারের ভালো কাজ সহ্য করতে না পেরে দেশকে অস্থিতিশীল করতে আবারও আগুন-সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
তাদের আগুন-সন্ত্রাসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়া রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। সে সময় ৪১৯টি ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ৪৯২ জন, আহত আড়াই হাজারের কাছাকাছি। এক-একটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত হত্যা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কেউ ভোলেনি। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রলবোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষগুলোর আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পবিত্র উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি পরিবেশবান্ধব নিরীহ লক্ষ লক্ষ গাছ।
নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করে ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এসব বাধা অতিক্রম করে সেদিন জনগণ গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তির দিনও বিএনপি-জামায়াত চক্র আবার জ্বালাও-পোড়াও করে চলন্ত বাস, ট্রেন, লঞ্চ, সরকারি স্থাপনায় পেট্রলবোমা মেরে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।
Advertisement
ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করা হয়। প্রায় ১২শ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়। ২৯০৩টি বাস/ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে আগুন দেয়। একাত্তর সালের পাকিস্তানি হানাদারদের মতো ভয়াবহতা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সেদিন জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বৃত্তদের পরাভূত করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। বিজয়ী হয়েছিল গণতন্ত্র। যার পথ ধরে আজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই বাসে আগুন দিয়েছে। কী হাস্যকর কথা? মির্জা সাহেব আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তারা কেন নিজেদের সুন্দর সময়কে অস্থিতিশীল করবে। এ কথা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে। আপনি এমন সব আজগুবি কথা বলে নিজেকে সার্কাসের জোকারে পরিণত করেছেন। আপনি বলতে পারেন, ভাই রে আমি তো কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই মার্কা মহাসচিব। আমি কীভাবে জানবো। দলটা তো চালায় লন্ডনে থাকা যুবরাজ আর জামায়াত।
বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল সেটা যে শুধু প্রতিপক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগই বলছে সেটাই নয়। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির একজন নেতার রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার (সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন-২০১৭ এফসি ৯৪) রায়ে বলেছে যে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি হচ্ছে এমন একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের ওপর হামলা চালায়। এমনকি অগ্নিসংযোগের মতোও ঘটনা ঘটায়।
হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম। তাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনো বিশ্বাস করে না। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করে তাদের জিম্মি করে রাখা। এ জন্যই তারা জনগণ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এখন কার্যত জামায়াতের বি-টিমে পরিণত হয়েছে।
২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত যে নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে তার সাথে কেবল পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্মমতার তুলনাই চলে। এরা হয়তো কৌশলগত কারণে সাময়িকভাবে নিজেদের আড়াল করে রাখে। তবে সময় সুযোগ পেলে যে আসল চরিত্রে বেরিয়ে আসবে, সেটার মহড়া তারা দিয়ে দিল। সময় বদলালেও চরিত্র বদলায়নি বিএনপির। এদের কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। দুস্কৃতকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে এদের রাজনৈতিকভাবেও চিরতরে বিদায় করতে হবে।
লেখক : সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।ইমেইল:haldertapas80@gmail.com
এইচআর/বিএ