মতামত

এ আঁধার কবে যাবে?

বর্তমান আইন অনুযায়ী আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেয়া নিষিদ্ধ হলেও গবেষণা বলছে এখনো দেশের ৬৪ শতাংশ মেয়ের তার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এটা ঠেকানো যাচ্ছে না। আর্থ-সামাজিক নানা বাস্তবতাই এর মূল কারণ। তবে এক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব।

Advertisement

এবার নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তমরুদ্দি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন ইউএনও। এ সময় বরকে কারাদণ্ড ও কাজীকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জোড়খালী গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়। জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের (২২) সঙ্গে ঠিক করা হয়। পারিবারিকভাবে বিয়ের সব আয়োজন করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বর নিজাম উদ্দিনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও বিয়ে পড়াতে আসা কাজী মো. আনোয়ার হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের বাসাইলে বাল্যবিয়ের অপরাধে আসাদুল ইসলাম (২২) নামে এক প্রবাসীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাতে উপজেলার সুন্যা পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আসাদুল ইসলাম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বেড়বাড়ী খন্দকারপাড়া গ্রামের ফন্নু মিয়ার ছেলে। বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের সুন্যা পশ্চিমপাড়া গ্রামের সবুর মিয়ার মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সামরিয়া আক্তারের (১৪) সঙ্গে গত রোববার (৮ নভেম্বর) সখীপুর উপজেলার বেড়বাড়ী খন্দকার পাড়া গ্রামের ফন্নু মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী আসাদুল ইসলামের বিয়ে হয়। পরদিন সোমবার (৭ নভেম্বর) বৌভাত শেষে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন আসাদুল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না ওই বাড়িতে হাজির হন। এ সময় বর আসাদুলকে আটক করে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক সংগঠনও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কাজ করছে। তবে বাল্য বিয়ে রোধ সংক্রান্ত সমস্ত কার্যক্রমের টার্গেট থাকে মেয়েরা। অথচ এ ব্যাপারে মেয়েদের মতামতকে খুব কমই গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে যদি অভিভাবকদের বুঝানো যায় বাল্য বিয়ের ক্ষতি সম্পর্কে তাহলে কাঙ্খিত ফল লাভ সম্ভব।

আসলে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকই পারেন বাল্য বিয়ে রোধে ভূমিকা রাখতে। যদি অভিভাবকদের বুঝানো যায় যে তাদের কমবয়সী মেয়ের বিয়ে হলে জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে তাহলে অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে। এ কারণে অভিভাবকদেরই দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারাই বড় ভূমিকা রাখেন।

Advertisement

আর বাল্য বিয়ের কারণগুলোও দূর করা সম্ভব হলে এ অভিশাপ থেকেও মুক্তি মিলবে। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন। অনেক সময় কম যৌতুক কিংবা যৌতুক ছাড়াই পাত্রস্থ করা যায় বলে কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিতে চান অভিভাবকরা। আর্থ-সামাজিক নানাবিধ কারণে বিয়ে দিয়েই ঝামেলামুক্ত হতে চান অনেক অভিভাবক। অথচ এর পরের বিষয়গুলোর কথা তারা ভাবেন না। বয়স কম থাকায় শারীরিক নানা সমস্যাসহ পারিবারিক অনেক সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কিশোরী মা যার নিজেরও শারীরিক বিকাশ হচ্ছে আবার তার গর্ভে বেড়ে উঠছে শিশু-এটা এক বিপদজনক পরিস্থিতি। শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রেও বাল্য বিয়ের ভূমিকা রয়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর