ফিচার

বনরূপা বাজারের বিক্রেতা পাহাড়ি নারীরা

পারমিতা চাকমা। থাকেন রাঙ্গামাটির অদূরে কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপগ্রাম বন্দুকভাঙ্গায়। শহর থেকে নদীপথে ঘণ্টাখানেকের পথ। বন্দুকভাঙ্গায় জুমে শাক-সবজি ও ফল-মূল উৎপাদন করে সে ফসল প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার রাঙ্গামাটি জেলার সবচেয়ে বড় হাট বনরূপা বাজারে এসে বিক্রি করেন।

Advertisement

প্রতি সপ্তাহে জুমে যে ফসল উৎপাদন হয়, সেগুলো নিয়ে হাটে আসেন তিনি। এসব পণ্য বিক্রি করে যা পান, তা-ই দিয়ে সপ্তাহের বাকি দিনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার ক্রয় করে ফেরেন গ্রামে। এভাবে চলে পারমিতা চাকমার সংসার।

শুধুই পারমিতা চাকমা নন। এভাবে শহরের অদূরে কাপ্তাই হ্রদ পাড়ি দিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাটে আসেন পাহাড়িরা। তবে বাজারে সাধারণত পাহাড়ি নারীদেরই পণ্য বিক্রি করতে বেশি দেখা যায়। পুরুষরা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ না থাকলে হাটে না এসে গ্রামেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন।

তাই নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জুম থেকে পণ্য নিয়ে একটি বোটে গ্রামের ১৫-২০ জন মিলে হাটে আসেন। প্রতিটি গ্রাম থেকে হাটবারে কয়েকটি বোট আসে। বন্দুকভাঙ্গা গ্রাম ছাড়াও বালুখালী, কেইল্ল্যামোড়া, হাজাছড়া, কুতুকছড়িসহ আরও বেশকয়েকটি গ্রাম থেকে পাহাড়িরা জুমের ফসল নিয়ে আসেন এ হাটে।

Advertisement

পারমিতা চাকমা জানান, জুম থেকে সাধারণত তারা সাবারাং পাতা, আমিলা গোটা, বাচ্চুরি (বাঁশ কোড়ল), মারফা, ধাইন্যা মরিচ (ছোট ঝাল মরিচ), কচুর ছড়া, কলার থোড়, আলু শাক, কলমি শাক, তিত বেগুন, বিলাতি ধনেপাতা, মুলা শাক, লাউ শাক, পুঁই পাতা, পুঁই ডাটা, পুুঁই বিচি, চিচিঙ্গা, কাঁচা ও পাকা পেঁপে, কাঁচকলা, জাম্বুরা, আনারস, কচি কাঁঠালসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও ফল-মূল নিয়ে আসেন।

যে সময়ে যে মৌসুম থাকে; সে সময়ে তারা ওই ফসল সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।

জুমের রাসায়নিকহীন টাটকা ফল ও সবজি কিনতে প্রতি শনি ও বুধবার হাট-বাজারে ভিড় করেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি জেলার বাইরে থেকেও পাইকাররা বিভিন্ন ফল সংগ্রহ করতে হাটে আসেন।

হাটে কিনতে আসা জুঁই চাকমা বলেন, ‘বাসার জন্য প্রতি শনি ও বুধবার জুমের টাটকা শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাই। হাটের দিন এসব পণ্যের দাম একটু কম থাকে। পাশাপাশি টাটকাও পাওয়া যায়। তাই তো প্রতি শনি ও বুধবারে শাক-সবজি ও ফল-মূল কিনতে হাটে আসি।’

Advertisement

শংকর হোড়/এসইউ/পিআর