বিশেষ প্রতিবেদন

রোগী শূন্য রাজশাহীর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো

জনবল সঙ্কট, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ না থাকায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে রাজশাহীর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। ফলে ক্লিনিকগুলোর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। আর এ কারণে দিন দিন রোগী শুন্য হয়ে পড়ছে ক্লিনিকগুলো। তবে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকাবাসীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এ বছর প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ৭৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। পরে বিগত জোট সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের নবম একনেক সভায় ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প) শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়।রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী, দেশের সকল এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। আর এ লক্ষ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় স্থাপন করা হয় মোট ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক। তবে শুরুর দিকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করলেও পরে তা অন্ধকারেই রয়ে যায়। জেলার পবা উপজেলায় ৩২টি, তানোরে ১৯টি, মোহনপুরে ১৯টি, গোদাগাড়িতে ৩৪টি, দূর্গাপুরে ১৯টি, পুঠিয়ায় ২৮টি, চারঘাটে ২৩টি, বাঘায় ২০টি, বাগমারায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ সকল ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডারকে (সিএইচসিপিকে) তিন মাসব্যাপী চিকিৎসা সেবার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে তারা রোগীদের প্রাথমিক সেবা প্রদান করে থাকেন।কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশু রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত শিক্ষা ও পরামর্শ, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। সরেজমিনে জেলার তানোর, গোদাগাড়ি ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সময়মতো খোলা হচ্ছে না। কোনো কোনোটি অনেক দেরিতে খোলা হলেও একজন হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে চালানো হচ্ছে ক্লিনিকগুলো। আর ক্লিনিকগুলোতে দেখা মেলেনি হেলথ প্রোভাইডার, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার।  তানোর উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন পরিষদের দেওতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় মাত্র একজন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ক্লিনিকটির স্বাস্থ্য সহকারী সামিউল। এসময় তিনি জানান, রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া জেলা ও সদর হাসপাতাল কাছাকাছি থাকায় অধিকাংশ রোগী এখানে আসেন না। ক্লিনিকটির রোগী সালমা বেগম জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোগীদের সেবা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানকার দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সহকারী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসেন। আবার একটা বাজলেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান। এদিকে, পবা উপজেলার ঘিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য সহকারী হুমায়ূন রোগী শুন্য অবস্থায় ক্লিনিকটির ভেতরে বসে আছেন। তবে ক্লিনিকটিতে দেখা মেলেনি কোনো রোগীর। এসময় তিনি জানান, আগে রোগী বেশি আসলেও বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম। আর সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে শুধু রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. মো. রিজাউল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, প্রকল্পটি শুরুর দিকে ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান ভালো ছিল। বর্তমানে নানা ধরনের সঙ্কটে ক্লিনিকগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এ ধরনের চিত্র জেলার বেশিরভাগ ক্লিনিকগুলোতে। বেধে দেয়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হচ্ছে না চিকিৎসা সেবা। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।বিষয়গুলো নিয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সোবহান জাগো নিউজকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত এলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চিকিৎসা সেবার মান ও সুবিধা-অসুবিধা মনিটরিং এর জন্য ইতোমধ্যে একজন পরিসংখ্যান সহকারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।এমজেড/এমএস

Advertisement