টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি ওই প্রকল্পের অনুকরণে ব্যক্তি উদ্যোগেও কৃষকরা বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় সবজি চাষ শুরু করেছে।
Advertisement
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার ১১৮টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৭৭৬টি পরিবারে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পের আওতায় নগদ প্রণোদনা হিসেবে প্রতি পরিবারে ১ হাজার ৯৩৫ টাকা ও সবজি বীজ বিতরণ করা হয়।
এরমধ্যে মধুপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৩৫২টি, ধনবাড়ীর ৭টি ইউনিয়নের ২২৪টি, গোপালপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২২৪টি, নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৩৮৪টি, দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৫৬টি, মির্জাপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪৪৮টি, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৩৮৪টি, কালিহাতী উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৪১৬টি, ঘাটাইল উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪৪৮টি, ভূঞাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৯২টি, বাসাইল উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৯২টি এবং সখীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২৫৬টি পরিবারের মাঝে নগদ ১ হাজার ৯৩৫ টাকা ও সবজি বীজ বিতরণ করা হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎসব উপলক্ষে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৩ হাজার ৭৭৬টি বাড়ির উঠানে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ শুরু করা হয়। এজন্য প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১ হাজার ৯৩৫ টাকা ও বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, সরকারি প্রণোদনার নগদ টাকা ও বিনা মূল্যে সবজি বীজ পেয়ে কৃষকরা বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পরও বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছে।
সরকারি প্রণোদনাপ্রাপ্ত কৃষকদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে বীজ ও সার কিনে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ করছেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় সবজি চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। এক শতাংশ জমিতে কৃষকরা রবি মৌসুমের শুরুতে মুলা, লাল শাক, কলমি, পাট, পুঁইশাক ও ঘিমা কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছে।
ইতোমধ্যে কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পরও স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
কালিহাতী উপজেলার দশকিয়া ইউনিয়নের দশকিয়া বেপারীপাড়া গ্রামের কৃষক আমীর আলী তালুকদার, নবী হোসেন নবা, একই এলাকার ঢোলকান গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান, ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা গোপাল গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ, ভারই গ্রামের চাষি ফরহাদুল ইসলাম তালুকদারসহ অনেকেই সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন।
Advertisement
তারা জানান, কৃষি অফিস থেকে দেওয়া নগদ টাকা ও বীজ পেয়ে তিনি বাড়ির উঠানে সবজি বাগান করেছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তারা বাড়তি সবজি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। বাড়ির আঙিনায় লাগানো সবজি এক মাসের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী হয়ে থাকে। এটা দেখে এলাকার অনেকেই বাড়ির উঠানে বা আশপাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রণোদনা না পাওয়া কৃষক আব্দুর রশিদ মিয়া, কান্দু শেখ, নাজমুল ইসলাম, কনাইল লাল সরকার, বলাই শীল, মর্জিনা বেওয়া, হারাধন কর্মকারসহ অনেকেই জানান, বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জায়গায় সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া দেখে তারা নিজেদের উদ্যোগে সবজি বাগান করেছেন। তাতে পরিবারের প্রতিদিনের সবজির জোগানের পাশাপাশি বিক্রিও করতে পারছেন। তাদেরও সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, কৃষকের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি সবজি বিক্রি করে কিছুটা আয় করার লক্ষে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ৩২টি পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি জানান, তাদের কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা ও বিনা মূল্যে সবজি বীজ দেওয়া হয়েছিল। এ বাগান কৃষকের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয়ের সংস্থান করেছে। ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ দেখে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরিফ উর রহমান টগর/এসইউ/এমকেএইচ