বিশেষ প্রতিবেদন

ওষুধ সঙ্কটে ব্যাহত কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম

শুরু থেকে কালীগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালোভাবে চললেও এখন তা বুড়িয়ে গেছে। ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে খোলার কথা থাকলেও তা খোলা হচ্ছে দেরি করে। অন্যদিকে ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা থাকলেও এর আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চাহিদামতো ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম।উপজেলার কুমারটেক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, কুমারটেক গ্রামের আঁখি বেগম (৫০), আকলিমা বেগম (২৫), মিতু আক্তার (১৬), মদিনা বেগম (২৫), সালমা বেগমসহ (৩৫) আরো কয়েকজন দলবলে কমিউনিটি ক্লিনিক ত্যাগ করছেন। এ সময় এই প্রতিবেদক তাদের চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা আমাদের চাহিদানুযায়ী এখানে ওষুধ পাচ্ছি না। তাই চলে যাচ্ছি। তারা আরও জানান, এখানে বেশ কিছুদিন যাবৎ ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্তব্যরতরা বলেছেন, ওষুধ ঠিক মতো আসে না। তাই আমরা তাদের চাহিদা মিটাতে পারছি না। কুমারটেক কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মী আইরিন বেগম জানান, গত দুই মাস যাবৎ ওষুধের বরাদ্ধ ঠিকমতো না পাওয়ায় রোগীদের চাহিদানুযায়ী ওষুধ দিতে পারছি না। কিছু ওষুধ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দের সহযোগিতায় পেয়েছি। সেখান থেকে কিছু কিছু করে রোগীদের দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যা পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কারণ এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী আসে।   কালীগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা উপজেলা উত্তরগাঁও গ্রামের আলেয়া বেগম (৫০) জানান, এখানে আসলে ঠিক মতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে আসতে ইচ্ছে করে না। একই গ্রামের জাকির হোসেন (৩০) জানান, ক্লিনিকে কর্মরত ও ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকদের আন্তরিকতায় এখানে আসা রোগীরা ঠিক মতো সেবা পাচ্ছে না। ফারুক মিয়া (২৮) জানান, এখানে পুরুষ রোগীদের চেয়ে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি। আর এই নারী রোগীর মধ্যে বয়স্ক নারী রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে এরা যখন ওষুধের জন্য এসে খালি হাতে ফিরে যায় তখন খুব খারাপ লাগে। কালীগঞ্জ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিলিমা ইয়াসমিন জানান, এখানে প্রতিদিন ৪০/৫০ জন রোগী আসে। কিন্তু বর্তমানে রোগী অনুুযায়ী তাদের ওষুধ দেয়া যাচ্ছে না। কারণ গত দুই মাস যাবৎ ওষুধের বরাদ্ধ কম আসছে।এদিকে, উপজেলার চৌড়া নয়াবাড়ী গ্রাম থেকে চান্দাইয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রেহেনা বেগম (৪০) জানান, তিনি নিজেও রোগী। তাছাড়া তার ৮ বছরের অসুস্থ মেয়ে সামিয়াকে চিকিৎসার জন্য ওই ক্লিনিকে নিয়ে এসেছেন। তিনি আরও জানান, আমরা গরীব মানুষ। ২ টাকায় খুব ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি চান্দাইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। একই গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব গুল আক্তার জানান, এই ক্লিনিকের লোকেরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তাছাড়া ২ টাকায় ওষুধও মিলে ভালো। লক্ষ্মী রানী (৫২) তার এক বছরের নাতি দ্বীপকে নিয়ে এসেছে এই কমিউনিটি ক্লিনিকে। তিনি জানান, আগে-পরে এই ক্লিনিক থেকে নেয়া ওষুধগুলো খুব কাজে দিয়েছে। তাছাড়া এখানে ২ টাকার বিনিময়ে ভালো ওষুধ ও সেবা পাওয়া যায়। এই ক্লিনিকে আসা শরীফা বেগম (২৮) তার মেয়ে শাওনকে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, অসুস্থ হলেই এখানে আসি। কারণ এখানে চিকিৎসা সেবা খুব ভালো পাওয়া যায়। যদিও এখানে রোগী একটু বেশি হয়। তারপরও আমরা অপেক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে যাই। চান্দাইয়া গ্রামের জয়া (৩৫) জানান, সমস্যা হলেই এখানে আসি। তবে সপ্তাহে যদি একজন ভালো ডাক্তার এখানে বসতো তাহলে আমাদের জন্য আরো সুবিধা হতো।  চান্দাইয়া কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, এখানে প্রতিদিন ৫০/৬০ জন রোগী আসে। কিন্তু রোগীদের চাহিদানুুযায়ী ওষুধ দেয়া যাচ্ছে না। কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোতে ওষুধের বরাদ্ধ যদি আরো একটু বাড়ানো যায়, তাহলে আগত রোগীরা সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।   কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোর ওষুধ আসে একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে। গত আগস্ট মাসে কমিউনিটি ক্লিনিকে বরাদ্ধকৃত ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর আসেনি। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছু ওষুধ বিশেষ ব্যবস্থায় ওইসব কমিউনিটি ক্লিনিকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওই ওষুধে রোগীদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওষুধের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। তবে প্রজেক্টের মাধ্যমে ওষুধ পেতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।  এসএস/এমএস

Advertisement