দেশজুড়ে

শেখার বয়সেই নৃত্যের শিক্ষক শিশু অস্মিতা

যে বয়সে নিজে শেখার কথা সেই বয়সেই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নৃত্য শেখাচ্ছে ১১ বছরের অস্মিতা রায় মিথিলা। তার নৃত্যের প্রশিক্ষণ নজর কাড়ছে জামালগঞ্জের সংস্কৃতিপ্রেমীদের। অস্মিতার প্রশিক্ষণে ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সন্তুষ্ট।

Advertisement

রোববার (৮ নভেম্বর) জামালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে জানা যায়, অস্মিতা জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার রায় ও গৃহিণী মিতালী রায়ের সন্তান। সে জামালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট থেকেই অস্মিতার নৃত্য শেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। প্রথমে উপজেলা সদরে ও পরে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকায় নৃত্য শেখে সে।

অস্মিতা নৃত্যের শিক্ষক তুলিকা ঘোষ চৌধুরী ও শ্রাবন্তী পূরকায়স্থের কাছ থেকে নৃত্য শিখেছে। শিশু শ্রেণি থেকেই সাধারণ নৃত্য, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্যে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে একাধিক বার জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে অনলাইনে সিলেটে ও ঢাকায় নৃত্য শিখছে অস্মিতা।

নৃত্য শেখার পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নৃত্য শেখানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে অস্মিতা। জামালগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করলে শিল্পকলা একাডেমি তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে প্রতি শুক্রবার সকালে তার সমবয়সী এক ছাত্রীসহ মোট ১৬ জন শিশুকে নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অস্মিতা। তার কাছে নৃত্য শিখে শিশুরাও খুশি। তার নৃত্য প্রশিক্ষণে সম্ভাবনা দেখছে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শিশু শিক্ষক অস্মিতা রায় মিথিলা বলে, শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যের শিক্ষক না থাকায় ইউএনও স্যার আমাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকায় যা শিখেছি সবটুকু তাদের শেখানোর চেষ্টা করছি।

নৃত্যের শিক্ষার্থী অরুনিমা চক্রবর্তীর মা শিউলী চক্রবর্তী বলেন, অস্মিতা ভালো নৃত্য করে জানি। ফেসবুকে দেখলাম সে শিল্পকলা একাডেমিতে বাচ্চাদের নাচ শেখায়, তাই আমার মেয়েকে নাচ শেখাচ্ছি।

শিক্ষার্থী মিথিলা তালুকদারের মা স্কুল শিক্ষিকা তৃপ্তি তালুকদার বলেন, অস্মিতা শিশু হলেও সে খুব ভালো ও সুন্দর করে আন্তরিকভাবে শিশুদের নৃত্য শেখাচ্ছে। তার নৃত্য শেখানোর খবর পেয়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে।

অস্মিতার মা মিতালী রায় বলেন, অস্মিতা ছোট থাকতেই নৃত্যের প্রতি দুর্বল ছিল। সে প্রথমে উপজেলায় পরে সুনামগঞ্জ, সিলেটে নৃত্য শিখেছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বেতনভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও সে কোনো বেতন নিচ্ছে না। শিল্পকলা এডাডেমির উন্নয়নে সে বেতন দিয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

জামালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমেদ জুয়েল বলেন, শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য শিক্ষক পদে অস্মিতা আবেদন করেছিল। বয়সে সে ছোট হলেও জেলা পর্যায়ের নৃত্যের শিক্ষকরা অস্মিতা পারবে বলে সনদ দেয়ায় আমরা তাকে নিয়োগ দিয়েছি। নৃত্য প্রশিক্ষণে সন্তোষজনকভাবে সে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

জামালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি শান্তিময় ভট্টাচার্য বলেন, শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য ও সংগীতসহ সকল প্রশিক্ষণে শিশুরা আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। নৃত্যের শিক্ষক অস্মিতা রায় মিথিলা নৃত্যের প্রশিক্ষণ ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। ইন্টারভিউ নিয়ে অস্মিতা রায় মিথিলাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাকে আমরা বাছাই করেছি অভিজ্ঞতা থাকার কারণে। তার নৃত্য শেখানোর কৌশল যথেষ্ট ভালো। আমরা আশা করছি একটা চমক তৈরি হবে এবং তার হাত ধরে যে ক্ষুদে শিল্পী তৈরি হবে তারা নৃত্য শিল্পে অবদান রাখবে।

লিপসন আহমেদ/আরএআর/জেআইএম